মুন্সীগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব ক্লিনিকে সার্বক্ষণিক ডাক্তার, দক্ষ নার্স, ব্রাদার, প্যাথলজিক্যাল টেকনিশিয়ান নেই। প্রায় সকল ক্লিনিকে পুরাতন বা ত্রুটিপূর্ণ মাইক্রোস্কোপে, অপ্রতুল আলো, নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অদক্ষ লোক দিয়ে মলমূত্র, রক্ত, কফসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এতে ভুল রিপোর্টে রোগীরা প্রতারিত হলেও ক্লিনিকব্যবসায়ীরা জমজমাট ব্যবসা করে টাকা-কামিয়ে নিচ্ছেন। অপরদিকে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে অনেক রোগীর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এসব অনিয়ম ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সেবা মনিটরিং দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সিভিল সার্জন অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে লাইসেন্স না থাকা কিংবা প্রতিবছর লাইসেন্স নবায়ন না করেও রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যবসায়ীরা। মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কে অবস্থিত একতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৬ আগস্ট ৪২ দিন বয়সী শিশু শাহজাদকে প্রশিক্ষণবিহীন নার্স মাকসুদা এবং ব্রাদার মোস্তাফিজুর রহমান মাত্রাতিরিক্ত নেবুলাইজার দেয়ায় ও ইনজেকশন পুশ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে। এর কিছুক্ষণ পর শিশুটি মারা যায়।
এর সপ্তাহ খানেক আগে শহরের উপকণ্ঠে এ আর ক্লিনিকের ডাক্তারের অবহেলা ও কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় টঙ্গীবাড়ি উপজেলার গরীব দিনমজুর আলী আকবরের স্ত্রী প্রসূতি মা পপিকে (২০) জীবন দিতে হয়েছে। এধরনের নির্মম ঘটনা প্রায়ই ঘটলেও স্থানীয় প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে ক্লিনিকগুলো দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে। জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬ উপজেলায় মোট ৭৫টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এরমধ্যে ২৫ টির কোন লাইসেন্স নেই, ১৪টি লাইসেন্সর আবেদন করা হয়েছে। তবে লাইসেন্স না পেয়েই বছরের পর বছর এ সকল ক্লিনিক-ডাযাগনস্টিক সেন্টার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যেগুলির লাইসেন্স আছে বলে দাবি করছে সেগুলো প্রতিবছর নবায়ন করা হচ্ছে না। লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিকও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো হচ্ছে- মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার কেযার, এ-প্লাস ডিজিটাল, পপুলার কেয়ার, স্বপ্ননীড়, সেন্ট্রাল; টঙ্গীবড়ি উপজেলার টঙ্গীবড়ি ক্লিনিক, আলমিনা, ইউনাইটেড, জে,এ জেনারেল হাসপাতাল, নিউ ডক্টরস কেয়ার, পদ্মা; সিরাজদিখান উপজেলার বসুবতি, পপুলার, বিক্রমপুর; শ্রীনগর উপজেলার আলরাজি, ফেমাস, দেশ, মোবাশ্বেরা প্যাথ এন্ড ডায়াগনস্টিক, এনি টাইম, মা মেডিক্যাল, খাজা, মায়া; লৌহজং উপজেলার পদ্মা, সেবা এবং গজারিয়া উপজেলার সেইফ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে দালাল চক্র রয়েছে, যারা কমিশনের ভিত্তিতে রোগীদের উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের কথা বলে গ্রাম্য, দরিদ্র অশিক্ষিত রোগীদের ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাক্তার, স্বাস্থ্য সহকারীদের সঙ্গে ক্লিনিকে কর্তৃপক্ষের অাঁতাত থাকে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা. বনদীপ লাল দাস বলেন, এ জেলায় ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টরে অনিয়ম-চিকিৎসার নামে প্রতারণার অভিযোগ শুনেছি। স্বাস্থ্যখাতে বিশৃৃঙ্খলা রোধে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
যায় যায় দিন
Leave a Reply