মেঘনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৬

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়া এমভি শরীয়তপুর-১ লঞ্চটিকে প্রায় ৩২ ঘণ্টা পর তীরে ভেড়াতে সক্ষম হয়েছে। বুধবার সকালে আরও ২৬টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড সদস্যরা। এর মধ্যে দুটি শিশু, ছয়টি নারী ও ১৮টি পুরুষের। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৬ তে। এখনো একের পর এক লাশ বের হচ্ছে তীরে নিয়ে আসা লঞ্চ থেকে।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও রস্তুম লঞ্চটিকে টেনে পাড়ের দিকে নিয়ে আসে।

লঞ্চের ভেতর কোস্টগার্ড ও দমকলবাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি শুরু করলে ২৬টি মৃতদেহ পাওয়া যায়। উদ্ধার করা লঞ্চ থেকে আরও মৃতদেহ পাওয়া যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের বরাত দিয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার বাংলানিউজকে লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিকে বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে উদ্ধার কাজ স্থগিত করা হয়েছিল। তবে নৌবাহিনী রাত ১০টা থেকে এক ঘণ্টা উদ্ধার কাজ চালায়।

বুধবার সকালে নৌবাহিনীর চিফ পেটি অফিসার শেখ জামাল জানান, ভোর চারটা থেকে তারা আবার উদ্ধার কাজ শুরু করেন। তাদের ১০ জনের মতো ডুবুরি কাজ করছেন।

বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, লাশ যেন ভেসে অন্য কোথায়ও চলে না যায় সে জন্য কোস্টাগার্ড ও দমকল বাহিনী টহলে রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান জানান, লঞ্চটি প্রায় ৭০ ফুট পানির নিচে ডুবে ছিল।

প্রসঙ্গত, যতবারই লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটে, ততবারই আগে রুস্তমকে ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হামজার সহযোগিতা ছাড়া কোনো উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয় না। ঘটনা ঘটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকাজে হামজা পাঠানোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় উদ্ধার কাজে দেরি হয় এবং হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।

ঘটনাস্থল উপস্থিত থেকে উদ্ধারকাজ তদারক করছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুল আলম ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন খান।

উদ্ধারকারী জাহাজের চারদিকে অর্ধশতাধিক ট্রলার নিয়ে ভিড় করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। একেকটি লাশ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে স্বজনদের কান্না ও আর্তচিৎকারে ভারি হয়ে উঠেছে মেঘনার বাতাস।

উল্লেখ্য, সোমবার রাত দুইটার দিকে প্রায় দু’শতাধিক যাত্রী নিয়ে এমভি শরীয়তপুর-১ লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার উত্তর চরমসুরা এলাকায় মেঘনা নদীতে ডুবে যায়।

রিয়াজ রায়হান, মাজেদুল নয়ন ও কাজী দীপু
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর
==========================

লঞ্চ টেনে তীরে নেয়া হচ্ছে॥ ৬৬লাশ উদ্ধার

মেঘনাতীরে আহাজারী বাড়ছে

মোহাম্মদ সেলিম, মুন্সীগঞ্জ থেকে : মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার চরকিশোরীর কাছে মেঘনায় ডুবে যাওয়া লঞ্চের উদ্ধার কাজ ১১ ঘন্টা বিরতির পর বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় আবার শুরু হয়েছে। লঞ্চটি ৯টায় ক্রেনদিয়ে পানির মধ্যে উচু করে টেনে তীরের কাছে নিয়ে আসে। লঞ্চটির উপর হয়ে ডুবে থাকায় তলাদেশ দেখা যায়। এরপরই একেএকে ডুবরীরা তুলে আনে মৃতদেহ। স্বজনদের কান্নার রোল পড়ে যায়।

এপর্যন্ত আরও ৩০টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এই নিয়ে উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৬। এদিকে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা বরিশাল থেকে দুর্ঘটনাস্থলে এসেছে পৌছেছে মঙ্গলবার রাত দেড় টায়। হামজা সকাল থেকে উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দিয়েছে। হামজা ও রুস্তম ২টি উদ্ধারকারী জাহাজ ৭০ ফুট পানির নিচে থাকা হতভাগ্য এমভি শরিয়তপুর-১কে টেনে মেঘনার মুন্সীগঞ্জ প্রান্তের তীরে আসে।

লঞ্চটি দ্রুত উদ্ধারের সব প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মো. আজিজুল আলম জানিয়েছেন, উদ্ধারকৃত ৪০টি লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হযেছে। বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরীদের সাথে নেভি এবং ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরীরাও কাজ করছে।

এদিকে মেঘনা তীরে স্বজনদের আহজারি বাড়ছেই। শত শত লোক স্বজনদের খুজে ফিরছে। মেঘনার মুন্সীগঞ্জ প্রান্তের চর কিশোরগঞ্জে একটি নোঙ্গরখানা খোলা হয়েছে। সেখানে অনেক স্বজনহারা মানুষ রাত কাটায়। তাদের বুক ফাটা আর্তনাত এখানকার বাতাশ ভাড়ি হয়ে উঠেছে।

মুন্সিগঞ্জ নিউজ

Leave a Reply