গতি ফিরে পাচ্ছে না মুন্সীগঞ্জ বিএনপি

একের পর এক পকেট কমিটি গঠন
মোজাম্মেল হোসেন সজল, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র মূল দল ছাড়া এখন সব কমিটিই হচ্ছে কেন্দ্র থেকে। কেন্দ্র থেকে এ সব চাপিয়ে দেয়া পকেট কমিটি গঠন নিয়ে মুন্সীগঞ্জ বিএনপি রয়েছে বেকায়দায়। কমিটি গঠনে জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদেরও কোন মতামত বা সুপারিশ নেয়া হচ্ছে না। এতে করে ত্যাগী ও দ নেতৃত্বের দেখা মিলছে না কমিটি গঠনে। জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও ওইসব অদ নেতাদের সমন্বয় হচ্ছে না।কোন রকম সম্মেলন না দিয়ে ঢাকায় বসে এ পর্যন্ত বিএনপির তিনটি সহযোগী সংগঠনের মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে। জেলা যুবদল ছাড়া বাকি দুইটি চাপিয়ে দেয়া কমিটির কার্যক্রম জেলা শহরে নেই। ঢাকায় বসে পদ নেওয়ার পর দলীয় কোন কর্মসূচিতে তাদের দেখা মিলছে না। এমনকি ওইসব নেতারা ঢাকায় বসবাস করে থাকেন। তারা ঢাকায় বসে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রা করে চলছেন পদ ধরে রাখার জন্য। এতে করে শহরে সরকার বিরোধী কোন আন্দোলনে লোকবল পাওয়া যাচ্ছে না। মাঠ কাঁপানো ছাত্রদলও একেবারে নিস্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। জেলা ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জসিম ঢাকায় বসবাস করেন স্থায়ীভাবে। ব্যবসাও করেন ঢাকাতেই। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল ও সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস মিয়াজী মহনের বসবাসও ঢাকায়। জেলা শ্রমিক দল, কৃষক দল ও মহিলা দলের কারো কোন কার্যক্রম নেই এখানে। এতে করে নেতাকর্মীর অভাবে সরকার বিরোধী আন্দোলনে তেমন লোকবলের দেখা মিলছে না দলটিতে। জেলা যুবদলের নবগঠিত কমিটি এখন মিছিল-মিটিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা,ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনকে সামনে রেখে পদ পাওয়ার আশায় অনেকেই ভিড়ছেন মিছিল-সমাবেশে। কমিটি গঠন কাজ শেষ হলে অনেককেই কর্মসূচিতে আর পাওয়া যাবে না বলে বিএনপি’র নেতাদের অভিমত। তাদের মতে, অনেকেই বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তাদের মিছিল মিটিংয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে জেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. আবদুল হাই আন্দোলন কর্মসূচিতে এলে তাকে চেহারা দেখাতে অনেকেই অংশ গ্রহণ করতে দেখা যায়। জেলা শহরে বিএনপি’র কার্যক্রম মো. আবদুল হাই ও তার ছোট ভাই মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের উপরই নির্ভরশীল । আবদুল হাইয়ের ছোট ভাই মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এই অঞ্চলে বিএনপি’র রাজনীতির মূল কান্ডারি। আবদুল হাইয়ের অনুপস্থিতিতে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন দলীয় নেতাকর্মীদের আর্থিক সুযোগ সুবিধা প্রদান ও সাংগঠনিক কর্মকান্ড গতিশীল করে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গেল পৌরসভা নির্বাচনে বিরোধী দলে থেকেও জেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. আবদুল হাই, তার ভাই মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও পঞ্চসার ইউপি চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান নির্বাচনের ব্যয় বহন ও ভোটারদের মন জয় করে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভায় শহর বিএনপি’র সভাপতি এ কে এম ইরাদত মানুকে মেয়র পদে জয়ী করতে সম হয় ।

এদিকে, ১৪ ফেব্র“য়ারি কোন রকম সম্মেলন না দিয়ে ঢাকায় বসে জেলা মহিলা দলের ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। এ কমিটিতে রহিমা সিকদারকে সভাপতি, শ্রীনগরের জাহানারা বেগমকে সাধারণ সম্পাদক ও টঙ্গীবাড়ির পাপিয়া ইসলামকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া এ কমিটি গঠন হওয়ায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। জেলা-উপজেলায় এ কমিটির কোন কার্যক্রম নেই। এর আগে গত ১ ফেব্র“য়ারি জেলা যুবদলের কমিটি কেন্দ্র থেকে হয়। অবশ্য এই কমিটি গঠনে জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের কোন বিরোধীতা ছিল না । এ কমিটিতে সাবেক দুই ছাত্রনেতাকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়। তাদের জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা মেনে নিলেও কমিটিতে মনিরুজ্জামান মনিরকে সাংগঠনিক সম্পাদক করার বিষয়টি কেউ মেনে নেয়নি। স্থানীয় রাজনীতিতে তার কোন কর্মকাণ্ড নেই। এদিকে গত ৩ ফেব্রয়ারি জেলা বিএনপির পার্টি অফিসে তাণ্ডব ও হামলার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে যুবদল নেতাদের অভিমত। কমিটি গঠনের পর থেকে যুবদলের কোন কর্মসূচিতে তার দেখা মিলেনি বলে যুবদল নেতাদের অভিযোগ। এছাড়া গত বছরের ১৬ আগস্ট ঢাকায় বসে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি অনুমোদন করে দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এই কমিটিতে শ্রীনগর উপজেলার আওলাদ হোসেন উজ্জ্বলকে সভাপতি ও গজারিয়ার ইদ্রিস মিয়াজী মহনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এই কমিটি গঠনের পর আজোবধি সরকার বিরোধী কোন আন্দোলনে জেলা শহরের পার্টি অফিসে তাদের দেখা মেলেনি। শহরেও তাদের কোন কার্যক্রম নেই। ঢাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাদের রয়েছে সুসম্পর্ক। এই কমিটির কার্যক্রমও ঢাকা ভিক্তিক। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক আতোয়ার হোসেন বাবুল বলেন, কাউন্সিল হলে তৃনমূল থেকে যোগ্য নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসতো। সংগঠনও শক্তিশালী হতো। কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া কমিটিতে কখনো যোগ্য নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসতে পারে না।

বাংলা ২৪ বিডি নিউজ

Leave a Reply