আবারও অশান্ত বাঘড়া

শ্রীনগরের বাঘড়া আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে ঘটছে একের পর এক খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও সংঘর্ষের ঘটনা। গেলো ৮ মাসে বাঘড়া ইউনিয়নে ৪টি খুন, ২টি দুর্ধর্ষ ডাকাতি ও এক ডজন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও বিগত ৩৫ বছরে বাঘড়ায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রায় ৫০টি খুনের ঘটনা ঘটে। প্রমত্তা পদ্মা লাগোয়া এ বাঘড়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পৃথক ৭ সন্ত্রাসী বাহিনী। পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের মদতে এখানে চলে সন্ত্রাসের লালন-পালন। খোদ শ্রীনগর থানার ওসির বিরুদ্ধে রয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী মদতের এমন অভিযোগ।

বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মীরা বা সমর্থক হলে মামলা নিতে অকপটে অপারগতা জানায় শ্রীনগর থানা পুলিশ। বাঘড়া ইউপির চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের সঙ্গে ওসির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলে সেখানে চেয়ারম্যানের সমর্থিত একটি সন্ত্রাসী বাহিনী বীরদর্পে চালাচ্ছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। সূত্র মতে, সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে জিম্মি সন্ত্রাসকবলিত বাঘড়ার নিরীহ জনসাধারণ। প্রত্যেক বাহিনীকেই চাঁদা দিতে হয় তাদের।

এ অঞ্চলের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের রয়েছে বেশ সখ্য। জনসাধারণকে জিম্মি করে এ অঞ্চলে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাঘড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের সমর্থিত শাহীন গ্রুপ, নুরুল হক গ্রুপ, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা পিন্টু গ্রুপ, বাঘড়া বিএনপির সভাপতি শামসু খাঁ’র সমর্থিত তাজেল গ্রুপ, রব ওরফে রবা ডাকাতের গ্রুপ, সাদ্দাম গ্রুপ ও মামুন গ্রুপ। এই ৭টি সন্ত্রাসী বাহিনী সামপ্রতিক কালে চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও খুনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে।

শ্রীনগর থানা সূত্র মতে, গেলো ৮ মাসে বাঘড়ায় শাহীন গ্রুপের হাতে খুন হয় স্কুলছাত্রী মৌসুমী। এছাড়া, ওরশেদ আলী হত্যা, মামুন গ্রুপের হাতে সংঘটিত আনসার হত্যা ও তাজেল গ্রুপের গুলিতে বাঘড়া ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী জাহাঙ্গীর খুনের ঘটনায় বাঘড়া অশান্ত হয়ে উঠে। ইতিমধ্যে সেখানকার ত্রাস তাজেল গ্রুপের প্রধান তাজেল, সোহরাব, মিজানুর, বাবু ও আছানুরকে ২টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে রাখা হয়েছে।

গত ১৩ই জুলাই গভীর রাতে বাঘড়া বাজারে সামপ্রতিককালের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সেখানে ৪টি জুয়েলারি ও ১টি কাপড়ের দোকান থেকে দেড় শ’ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৫ শ’ ৫০ ভরি রুপার অলঙ্কার ও নগদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা লুটে নেয় ডাকাতদল। এদিকে, ১৬ই আগস্ট রাত ২টার দিকে ইউনিয়নের রুদ্রপাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী সামাদ সিকদারের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এসময় সন্ত্রাসীরা প্রবাসীর স্ত্রী সাবিনা (৩৩) কে গুলি করে গুরুতর আহত করে। এ ব্যাপারে শ্রীনগর থানায় মামলা হয়েছে ঠিকই।

কিন্তু আসামিরা এলাকায় দাপটের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এ ঘটনার একদিন পরই নুরুল হক বাহিনী হানা দেয় বাঘড়া বাজারের পরিচালনা কমিটির সভাপতি তাজুল মাদবরের বাড়িতে। তিনি বিএনপি নেতা বলে শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান থানায় কোন মামলা পর্যন্ত নেননি। এ প্রসঙ্গে শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, বাঘড়া এখন শান্ত। সেখানে এখন আর কোন ধরনের সমস্যা নেই।

মানবজমিন

Leave a Reply