মুন্সীগঞ্জ জামায়াত শিবির কর্মীদের নিরাপদ আশ্রয়ের অভয়ারন্য

সামসুল হুদা হিটু: পাশের ৭টি জেলায় সহিংস কর্মকান্ড চালিয়ে নিরাপদে থাকতে জামায়াত শিবির নেতাকর্মীরা মুন্সীগঞ্জকে বেছে নিয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এর ফলে পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরী ও ইছামতি নদী বিধৌত মুন্সীগঞ্জ জেলা জামায়াত শিবির নেতাকর্মীদের নিরাপদ আশ্রয়ের অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। গত ৬ ফেব্র“য়ারি থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ২৩ দিনে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন জেলায় সহিংসতা অব্যাহত রাখলেও মুন্সীগঞ্জ জেলায় তাদের তৎপরতা না থাকায় এমন একাধিক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পুলিশ ও রাজনৈতিক মহলে।

কেননা, মুন্সীগঞ্জ জেলার উত্তরে ধলেশ্বরী, পূর্ব দিকে মেঘনা, দক্ষিনে পদ্মা ও পশ্চিমে ইছামতি নদী বয়ে গেছে। আর এ জেলার চারিদিকে রয়েছে নারায়নগঞ্জ জেলা, ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ উপজেলা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, চাদঁপুর ও কুমিল্লা জেলা। চাদঁপুরে জাতীয় পতাকায় আগুনসহ এসব জেলায় জামায়াত শিবির নেতাকর্মীরা সহিংস কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছে।


এদিকে জামায়াত ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের তৎপরতা জানতে গোয়েন্দা ও পুলিশের একাধিক সদস্য চেষ্টা চালালেও তাদের অবস্থান সনাক্ত করতে পারেনি। তবে জামায়াত শিবির কর্মীরা মোবাইলের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকান্ড চালিয়ে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নতুন সংযোগ নিয়ে কর্মকান্ড চালাচ্ছে বলে পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত হয়েছে।

এ জন্য মুন্সীগঞ্জ পুলিশ শহর ও শহরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে থাকা মোবাইলের দোকানগুলোতে নজরদারি শুরু করেছে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা যাতে সরকারি নিয়মানুযায়ী বিভিন্ন কোম্পানীর সংযোগ (সিম) বিক্রি করে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

জেলা যুবলীগের যুগ্ন সম্পাদক সাইফুল বিন সামাদ শুভ্র জানান, জামায়াত শিবির নেতাকর্মী আশেপাশের জেলাগুলোতে সহিংস কর্মকান্ড চালিয়ে পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে নদী পাড়ি দিয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকছে। দলীয় নির্দেশনা পেলে আবার অন্য জেলায় গিয়ে অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে মুন্সীগঞ্জে চলে আসছে।


তিনি মনে করেন, তাদের থাকার স্থান নিরাপদ রাখার জন্যই মুন্সীগঞ্জ জেলায় কোন সহিংস কর্মকান্ড চালাচ্ছে না জামায়াত শিবির নেতাকর্মীরা।
তিনি গত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সেদিন দেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা হলেও একমাত্র মুন্সীগঞ্জে বোমা ফুটেনি। পরে জানা গেছে জঙ্গী নেতা শায়খ আব্দুর রহমান সেদিন মুন্সীগঞ্জে অবস্থান করায় এ জেলাকে নিরাপদ রাখতে বোমা বিস্ফোরন ঘটায়নি জেএমবি’র জঙ্গিরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলায় জামায়াত শিবির নেতাকর্মীদের তৎপরতা না থাকার বিষয়টি নিয়ে বাহ্যিক ভাবে ভাল বলা হলেও তারা গোপন তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে এমন খবর রয়েছে পুলিশের কাছে। তাই তাদের গোপন তৎপরতা সনাক্ত করতে মোবাইলের নাম্বার সনাক্ত করে তা মনিটরিং করার চেষ্টা চলছে। তবে জামায়াত শিবির নেতাকর্মীদের মোবাইল ফোন বেশীর ভাগই বন্ধ থাকায় তাদের গতিবিধি জানতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা আরও জানান, জামায়াত শিবির নেতাকর্মীরা মোবাইলের সিম পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের গোপন তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। এ জন্য জেলার বিভিন্ন মোবাইল সিম বিক্রির দোকানগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ।

এছাড়া ব্যবসায়ীদের সরকারি নিয়মানুযায়ী বিভিন্ন কোম্পানীর সংযোগ (সিম) বিক্রি করতে বলা হয়েছে।

এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, শহর ও শহরের উপকন্ঠের বেশ কয়েকটি এলাকায় জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরা অবস্থান করলেও তারা অপরিচিত হওয়ায় এবং চুল, দাড়ি কেটে বেস পরিবর্তন করায় তাদের সনাক্ত করা যাচ্ছে না।

এছাড়া জামায়াত শিবির নেতাকর্মীরা মুন্সীগঞ্জে থাকলেও তাদের বাড়ি অন্য জেলায় হওয়ায় এবং তারা মাদ্রাসার ছাত্র, দোকানে কর্মচারী, লজিং মাস্টারসহ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে বসবাস করায় তাদের চেনা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি শহরের ইসলামবাগ এলাকায় শিবিরের আস্তানা থেকে ধারালো অস্ত্রসহ ৩’শ রোকন সদস্য ও ৮’শ ছাত্র শিবির সদস্যের তালিকাসহ কয়েকটি রেজিস্টার খাতা উদ্ধার করেন। জামায়াত শিবিরের এ নেতাকর্মীরা বর্তমানে মুন্সীগঞ্জে অবস্থান করছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. আবুল বাসার জানান, রেজিস্টার খাতায় জামায়াত শিবির নেতাকর্মীদের নাম ও মোবাইল নাম্বার থাকলেও তাতে পূর্নাঙ্গ ঠিকানা নেই। তাই এ তালিকা অনুযায়ী তাদের সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

মুন্সীগঞ্জকে তারা নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ রকম ধারনা করা যায়। তবে পুলিশের কাছে এমন কোন তথ্য নেই।

ওয়ান নিউজ

Leave a Reply