আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘র্যাব কোনো অপকর্ম করে থাকলে তার দায় খালেদা জিয়ার ওপরই বর্তাবে।’ মুন্সীগঞ্জের জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ‘র্যাব বিলুপ্তি’র দাবি প্রসঙ্গে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় খালেদা জিয়ার দাবির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
হানিফ এ সময় বলেন, ‘খালেদা জিয়াই র্যাব গঠন করেছিলেন। এমনকি খালেদা নিজেও স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের শায়েস্তা করার জন্যই র্যাব গঠন করা হয়েছিল। তিনি র্যাবকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিলেন। এর ফলে র্যাবের কোনো কোনো সদস্যের মাঝে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে। র্যাবের সে সব অপকর্মের দায় খালেদা জিয়ার ওপরই বর্তাবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের র্যাব বিলুপ্তির দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এ ধরনের দাবি করতেই পারেন। র্যাবকে কি উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়েছিল, ইতোমধ্যেই বেগম খালেদা জিয়া তা স্বীকার করেছে। আমরা অন্তত একটি বিষয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ দেই, যে এর আগে তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে আইনজীবীদেও সভায় বলেছেন ‘‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বা নেতাকর্মীদের শায়েস্তা করার জন্যই র্যাব গঠন করা হয়েছিলো।’’
২০০৪ সালে র্যাব গঠন করা হয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। এটা তিনি অনেকটাই অবচেতন মনে স্বীকার করেছেন। আমরা সেই র্যাবকে দেশের সন্ত্রাস দমনের জন্য ব্যবহার করেছি। বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে দীর্ঘ দুই বছর এটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার কারণে অনেকের মাঝেই রয়ে গেছে এ রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বা দায়িত্বের বাইরেও দুই একটা অপকর্ম করার প্রবণতা তাদের মধ্যে রয়ে গেছে। তার থেকে দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে।’
বেগম খালেদা জিয়া আজকে মুন্সিগঞ্জের জনসভায় যে বক্তব্য দিয়েছেন তার অধিকাংশই অসত্য এবং ভিত্তিহীন। তার স্বভাব অনুযায়ী বরাবরের মতো এবারো আওয়ামী লীগকে বিষোদগার করেছেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন।
যেমন নারায়ণগঞ্জে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ সরকার তাৎক্ষনিকভাবে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, বাংলাদেশের কোনো সরকারই এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা, যারা র্যাবে ছিল, সেই র্যাব কর্মকর্তাদেরকে, যাদেরকে সন্দেহ করা হয়েছিল তাদেরকে গ্রেফতার করে তদন্তপূর্বক বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে পাঠানো হয়েছে। এমনকি তাদের শুধু অবসরে পাঠানো হয়নি, তাদেরকে রিমান্ডে পাঠানো হয়ছে। এরপরও বেগম খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছেন যে তাদেরকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে হত্যা মামলা দেখানো হয়নি। এ মিথ্যা তথ্য তিনি কেন দিয়েছেন, সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। কারণ সবাই জানে তাদেরকে এ হত্যা মামলায় তাদের আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।’
তিনি অভিযোগ করেছেন, দেশে যত গুম-খুন-হত্যা ঘটনা ঘটেছে তার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রধান্ত্রীকে আইনের আওতায় আনা হবে। খালেদা জিয়া এ কথা বলার আগে আয়নায় তার নিজের চেহারা দেখার দরকার ছিল। তিনি ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করেছেন, তখন যে হত্যা-সন্ত্রাস-নারকীয় ঘটনা ঘটেছে তার জবাবদিহি কে করবে? উনি যে ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হমলা করে তার সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে, তার সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা হামলা করে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাতর্মীদেও হত্যার ষড়যন্ত্রে ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছিল, তার জবাবটা কে দেবে। সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সাহেবকে প্রকাশ্য জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে হত্যা করা হয়েছিলো সে দায়ভারটা কে নেবে? টঙ্গীর জনপ্রিয় এমপি আহসান উল্লাহ মাস্টারকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো, তার দায়ভার কে নেবে? বৃটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চোধুরীকে শাহজালালের মাজারে হত্যার চেষ্টা করেছিলো তার দায় কে নেবে? আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে গত্যা তরা হয়েছিলো। এর দায়ভার বেগম খালেদা জিয়াকে নিতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে এ সকল অপকর্মের দায় স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাক।
দেশে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যেও প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিষয়ে জনগণ তার মুখ থেকে আর কোনো কথা শুনতে চায় কী না সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। উনি ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন করেছেন। শুধু উনার পুত্রদ্বয়ই নয় উনি নিজেও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। উনার পুত্ররা যে দুর্নীতি দেখিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশের মানুষ বেগম খালেদা জিয়াকে আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনবেন, এটা আমার মনে হয় স্বপ্ন-স্বপ্নই থেকে যাবে।’
দ্য রিপোর্ট
Leave a Reply