কাজী সাবি্বর আহমেদ দীপু: বছরের পর বছর খুঁড়িয়ে চলছে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। ডাক্তার ও জনবল সংকট, কর্তব্যরত ডাক্তারদের অনিয়ম এবং অবহেলায় ভেঙে পড়েছে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা। কাগজপত্রে গত ১১ বছর ধরে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও বাস্তবে চলছে ৫০ শয্যার ডাক্তার ও জনবল দিয়ে। এর ফলে প্রতিদিন আউটডোরে ৮শ’ থেকে সহস্রাধিক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। রোগীরা প্রচণ্ড গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অন্যদিকে এ হাসপাতালের তিনটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে দুটিই দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। একটি সচল থাকলেও তা কয়েকদিন পরপর মেরামত করে চালু রাখা হচ্ছে। এর ফলে প্রায় সময়ই বাইরে থেকে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রেফার্ড করা রোগীকে ঢাকায় নিতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে ৪টি সিনিয়র কনসালটেন্ট পদের মধ্যে গত এক যুগ ধরে মেডিসিন, পাঁচ বছর ধরে নাক, কান ও গলা এবং চক্ষু বিভাগের কনসালটেন্টের পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট নেই, জুনিয়র দিয়ে চালানো হচ্ছে এ বিভাগটি। অন্যদিকে অসুস্থ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে প্রথমেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিতে হয়। অথচ জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারের পদটিও দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য।
এ ছাড়া দারোয়ান, নৈশপ্রহরী, মালি, এমএলএসএস ও ইলেক্ট্রিশিয়ানের পদেও জনবল নেই এ হাসপাতালে। অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্নতা এ হাসপাতালের নিত্যদিনের চেহারা। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ছাড়া কোনো ডাক্তার মুন্সীগঞ্জে থাকেন না। তারা ঢাকা থেকে আসেন। এতে কর্মস্থলে বিলম্বে পেঁৗছার ডাক্তাররা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও ৫০ শয্যার ডাক্তার ও জনবল দিয়ে চলছে গত ১১ বছর ধরে। এখন ৫০ শয্যার লোকবলও নেই হাসপাতালে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের ভবনটি মেরামত না করায় এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতি বছর একাধিকবার অনুষ্ঠিত সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হলেও কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লিখিতভাবে জানালেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, ডাক্তার ও জনবল নিয়োগ কার্যক্রমের ফাইল বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকা পড়ে আছে। আর নিয়োগ পক্রিয়ার কার্যক্রম চার থেকে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অবসরে চলে যাওয়ায় নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া সম্ভব হয়নি।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার সাখাওয়াত হোসেন জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন আউটডোরে ৮শ’ থেকে এক হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একজন ডাক্তার গড়ে ১৫০ জনের বেশি রোগী দেখায় রোগীরাও সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। ডাক্তারকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মু. সিদ্দিকুর রহমান সমকালকে বলেন, রোগীদের চিকিৎসাসেবা উন্নত করতে হলে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার ও জনবল নিয়োগ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ডাক্তার ও জনবল সংকট ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালটি আরও একাধিক সমস্যায় জর্জরিত। এসব সমস্যা নিরসনে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন সভায় অবহিত করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
সমকাল
Leave a Reply