আলুবীজ রোপণের উৎসব: লক্ষাধিক শ্রমিকসহ কৃষক পরিবারের সদস্যরাও কাজে ব্যস্ত

কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু: মুন্সীগঞ্জ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আলুবীজ রোপণের মহোৎসব শুরু হয়েছে। কৃষকের ব্যস্ততা দেখে বোঝার উপায় নেই, গত তিন মৌসুমে তারা লাখ লাখ টাকার লোকসানের কবলে পড়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তারপরও লাভের আশায় নভেম্বরের শুরু থেকেই জমি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে কৃষককুল চলতি মৌসুমে আলু আবাদে নেমে পড়েন নিজ নিজ জমিতে।

অন্যদিকে কৃষকের জমিতে আলু আবাদে যুক্ত হয়ে জেলার বিস্তীর্ণ জমিতে আলুবীজ রোপণ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত লক্ষাধিক পুরুষ ও নারী শ্রমিক। তারা রোজ হিসাবে আবার চুক্তি হিসাবে কৃষকের জমিতে আলুবীজ রোপণ করছেন। নভেম্বরে শুরু হওয়া আলুবীজ রোপণ কাজে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যস্ত থাকবেন শ্রমিকরা। একই সঙ্গে বাড়ির আঙিনায় কৃষকদের সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন বাড়ির গৃহিণীরাও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৭৫ থেকে ৮০ হাজার কৃষক পরিবার আলুআবাদের সঙ্গে জড়িত। তাই পরিবারগুলো এখন আলুবীজ রোপণ করে লাভের আশায় নতুন স্বপ্ন বুনছেন। আলুর বাম্পার ফলন করেই আগামীর অর্থনৈতিক ভিত তৈরির স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার চরাঞ্চলের চরকেওয়ার, বাংলাবাজার, মোল্লাকান্দি, শিলই, আধারা, মহাকালী, বজ্রযোগিনী, রামপাল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আলদী, ধামারণ, কাঠাদিয়া, শিমুলিয়া, যশলং, ধীপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে এবং সিরাজদীখান, লৌহজং, গজারিয়া ও শ্রীনগর উপজেলাজুড়ে আলুবীজ রোপণ কাজে কৃষকরা এখন মহাব্যস্ত। তাদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিভিন্ন জেলার পুরুষ-নারী শ্রমিক ও কৃষক পরিবারের সদস্যরাও।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলু আবাদের মৌসুম এলে রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নিলফামারী, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রামসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শ্রমিকরা রোপণ কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় এক লাখ শ্রমিক বর্তমানে কৃষকের সঙ্গে আলুবীজ রোপণ কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। রংপুর জেলা থেকে আগত শ্রমিক আব্বাস মিয়া জানান, কোথাও চুক্তি অনুযায়ী আবার কোথাও দিনব্যাপী মজুরি নিয়ে তারা কৃষকের জমিতে আলুবীজ রোপণ কাজ করছেন। রোপণ কাজ শেষে ফিরে যাওয়ার পর আবার আলু উত্তোলনের সময় তারা আসবেন মুন্সীগঞ্জ জেলায়।

মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আল মামুন জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৯ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শীতের শুরুতেই মুন্সীগঞ্জ সদর, সিরাজদীখান, লৌহজং, টঙ্গিবাড়ী, গজারিয়া ও শ্রীনগর উপজেলা বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আলু আবাদের উৎসব শুরু হয়েছে।

Leave a Reply