সমকামিতার ফাঁদে পড়ে খুন হন স্থপতি ইমতিয়াজ: ডিবি

চ্যাটিং অ্যাপের মাধ্যমে স্থপতি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ ভূঁইয়ার (৪৭) সঙ্গে একটি চক্রের সদস্য আসিফের পরিচয় হয়। ৭ মার্চ ইমতিয়াজকে মোবাইল ফোনে কলাবাগানের একটি বাসায় ডেকে নেন আসিফ। সেখানে আগে থেকেই ছিলেন আরাফাত, মুন্না ও মেঘ। তারা সবাই মিলে তাকে সমকামিতার ফাঁদে ফেলে টাকার জন্য মারধর করেন। একপর্যায়ে ইমতিয়াজ মারা যান।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইমতিয়াজ হত্যার ঘটনায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেফতার আসামি মেঘ আনোয়ার ওরফে এহসান। তার দেয়া জবানবন্দি থেকেই এই তথ্য জানা গেছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

মামলার অপর দুই আসামি মুন্না ও অভির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রহিমা আক্তারের আদালতে আসামিদের হাজির করা হয়।

মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক জামাল হোসেন জানান, মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবি পুলিশ দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত দুইজনের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে আসামি মেঘ আনোয়ার হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। পরে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, একটি অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে বাসায় ডেকে নিতো এই চক্র। পরে আপত্তিকর অবস্থার ভিডিও, ছবি রেকর্ড করে ওই ব্যক্তির কাছে টাকা আদায়ের চেষ্টা করতো। ভুক্তভোগীরা সামাজিক অবস্থানের কারণে কখনোই এ বিষয়ে মুখ খুলতেন না। চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণের টাকা জমা হতো চক্রের সদস্য আরাফাতের মায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, ওই অ্যাপের মাধ্যমেই চক্রের সদস্য আসিফের সঙ্গে স্থপতি ইমতিয়াজের পরিচয় হয়। আসিফ ৭ মার্চ ইমতিয়াজকে মোবাইল ফোনে কলাবাগানের একটি বাসায় ডেকে নেন। সেখানে আগে থেকেই আরাফাত, মুন্না ও মেঘ ছিলেন। তারা সবাই মিলে তাকে ফাঁদে ফেলে টাকার জন্য মারধর করেন। একপর্যায়ে ইমতিয়াজ মারা যান।

ওইদিন ইমতিয়াজের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানায় ৯ মার্চ হত্যা মামলা হয়। পরে ২২ মার্চ মামলাটি জেলা ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হলে তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহযোগিতায় রোববার সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মুন্না, মেঘ আনোয়ার ও অভিকে গ্রেফতার করে।

আসামিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার একটি গ্যারেজ থেকে হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত একটি গাড়ি জব্দ করা হয়।

সোমবার (২৭ মার্চ) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার গোলাম সবুর জানান, হত্যায় জড়িত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আরাফাত ও আলিফ নামের আরও দুইজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

তিনি জানান, ইমতিয়াজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির নকশার কাজ করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি গত ৭ মার্চ দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরেন নি। এ নিয়ে ৮ মার্চ তার স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ৮ মার্চ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের মরিচা সেতু এলাকার একটি ঝোঁপের ভেতর থেকে ইমতিয়াজের লাশ উদ্ধার হয়। কিন্তু আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় বের করতে না পারায় বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি দাফন করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি লাশের ছবি থেকে পরিবার জানতে পারে সিরাজদিখানে যে ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার হয়েছে, তা ইমতিয়াজের। পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে মুন্সীগঞ্জ পৌর কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করে শনাক্ত করেন ইমতিয়াজের স্বজনেরা।

সময় সংবাদ

Leave a Reply