মুন্সীগঞ্জে প্রবাস ফেরত শ্যামল ব্যাপারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী শাহাদাত ব্যাপারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এলাকায় ট্রলার ঘাটের ইজারা, নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, আধিপত্য বিস্তার ও জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে শ্যামলকে খুন করা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব। মুন্সীগঞ্জের আলোচিত এই হত্যাকা-ে গ্রেপ্তার অপর দু’জন হচ্ছে মহিউদ্দিন ব্যাপারী (২০) ও হায়াতুন ইসলাম (৪২) । এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল ও গোলাবারুদ এবং দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, গত ১৪ জুন গভীর রাতে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের পূর্বরাখি এলাকায় শ্যামল ব্যাপারী নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় কিছু দুর্বৃত্ত ঘরে ঢুকে তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন।
স্থানীয় লোকজন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবিতে এলাকায় মানববন্ধন করে। র‌্যাব এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার গভীর রাতে র‌্যাব গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এবং র‌্যাব-১৪ এর একটি দল মুন্সীগঞ্জ সদর এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহাদাতসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

কমান্ডার মঈন জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শাহাদাত ব্যাপারীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের সন্ত্রাসী দল পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ১৪ জুন রাতে শ্যামলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এলাকায় ট্রলার ঘাটের ইজারা, নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন, আধিপত্য বিস্তার ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে শ্যামলের নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে শাহাদাতের বিরোধ চলছিল। এর জেরে শ্যামলের সঙ্গেও শাহাদাতের বাগ্বিতণ্ডা ও ঝগড়া হয়। পরবর্তীতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয় বাজারে ফার্মেসিতে শাহাদাতের উপস্থিতিতে শ্যামলের ভাইদের কুপিয়ে জখম করে তার লোকজন। এ ঘটনায় শ্যামল বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় শাহাদাত ও তার ছেলে মহিউদ্দিনসহ অন্যান্য সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

র‌্যাব কমান্ডার জানান, শাহাদাত ব্যাপারী গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু তার ছেলে মহিউদ্দিন ব্যাপারী ও তার এক সহযোগী এই মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। পরবর্তীতে শাহাদাত ব্যাপারী ও তার ছেলে আদালত থেকে জামিন পায়। আত্মগোপনে থাকাকালে শ্যামলকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে শাহাদাত। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শাহাদাত আগে থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র, ককটেল ও ধারালো অস্ত্র সংগ্রহ করে রাখে। বেশ কয়েক সহযোগী ও সন্ত্রাসী বাহিনীর ১৫-২০ জন সদস্য শাহাদাতের নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৪ জুন রাত দেড়টার দিকে শাহাদাত ও তার লোকজন শ্যামলের বাড়ির চারদিক থেকে ঘেরাও করে হামলা চালায়। এ সময় তারা শ্যামলের ঘরে ঢুকে তার পা, বুক, পিঠ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি চালায়। এরপর ধারালো চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে শ্যামলকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে তারা গুলি করে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

নিহত শ্যামল ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে অবস্থান করে চাকরি করত। দেশে ফিরে ২০১০ সালে পুনরায় মধ্যপ্রাচ্যের অন্য একটি দেশে চলে যায়। ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসেন তিনি।

জনকন্ঠ