ফয়সাল হোসেন: উন্নয়নকাজের কথা বলে তিন ফুট গভীর গর্ত করে সড়কটি ৯ মাস ধরে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কে জমছে পানি, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যান চলাচল। শুষ্ক মৌসুমেও এবড়োখেবড়ো সড়কে চলতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ এই সড়কটি ১০টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র পথ। সড়কটির অবস্থান মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের আধারা ইউনিয়নে।
জাজিরা গ্রাম-মিনাবাজার সড়কটি জাজিরা সেতুর দক্ষিণ পাশ দিয়ে চরাঞ্চলের মিনাজারের দিকে চলে গেছে। জাজিরা থেকে মিনাবাজারের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। এই পথে ৯ মাস ধরে চরম দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী, চালক, যাত্রী ও স্থানীয় লোকজন।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, তিন ফুট গভীর করে মাটি কেটে রাখা হয়েছে। সড়কের মধ্যে কোথাও কোথাও এক থেকে দেড় ফুট পরিমাণ কাদার স্তর জমে আছে। পুরো সড়ক সরু নালায় পরিণত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পথচারী, মালবাহী অটোরিকশা, যাত্রীবাহী অটোরিকশা চলাচল করছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সানটেক এন্টারপ্রাইজের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী জুলফিকার হায়দার গত ৩ জুন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, জিনিসপত্রের দামের কারণে কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যে আবারও কাজ শুরু হবে। তবে গতকাল পর্যন্ত রাস্তাটির উন্নয়নকাজ শুরু হয়নি।
গতকাল যোগাযোগ করলে জুলফিকার হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাজিরা সেতুর ডান পাশের সড়কটিও আমাদের এ প্রকল্পের অধীনে। সেখানে খোয়া বিছানো হয়েছে। সেতুর বঁা পাশ দিয়ে জাজিরা-মিনাবাজার সড়কটিতেও ১৫-২০ দিনের মধ্যে বালু ফেলে কাজ শুরু করা হবে।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কটি চরাঞ্চলের জাজিরা, কুঞ্জনগর, সৈয়দপুর, শিকদারকান্দি, বকচর, চর আবদুল্লা, সুমারঢালী কান্দি, চর্যকেন্দ্রসহ (মান্দ্রাতলি) ১০ গ্রামের ২০ হাজার মানুষের একমাত্র যাতায়াতের পথ। সড়কটির দক্ষিণ দিকের শেষ প্রান্তে চরাঞ্চলের বিখ্যাত মিনাবাজার। ওই বাজারসহ ১০ গ্রামের কয়েক শ দোকানের মালামাল, স্থানীয় কৃষকদের কৃষিপণ্য এ সড়ক দিয়ে মুন্সিগঞ্জ শহরে ও ঢাকায় পাঠানো হয়। বছরখানেক আগে সড়কটি ইট বিছানো অবস্থায় ছিল। তবে সড়কের উন্নয়নকাজের জন্য প্রায় ৯ মাস আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিন ফুট গভীর করে মাটি খনন করে। এর পর থেকে কাজ ফেলে রেখেছে তারা।
জাজিরা এলাকার বাসিন্দা রিপন মোল্লা বলেন, ‘ইটের রাস্তায় খানাখন্দ ছিল, ভোগান্তি নিয়ে কোনো রকমে যাতায়াত করতে পারতাম। ঠিকাদার মাটি কেটে খাল বানিয়ে পালিয়েছেন। বৃষ্টি এলেই কোমরসমান পানি জমছে। রোদ উঠলে হাঁটুসমান কাদা হচ্ছে। এ রাস্তা দিয়ে অসুস্থ তো দূরে থাক, সুস্থ মানুষ যাতায়াত করতে ১০০ বার চিন্তাভাবনা করেন।’
স্থানীয় অটোরিকশাচালক আল আমিন ঢালী বলেন, ‘রাস্তাটি কোনোভাবেই গাড়ি চালানোর উপযুক্ত নয়। এর পরও মানুষের জোরাজুরিতে ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা–নেওয়া করতে গাড়ি চালাই। প্রতিদিনই গাড়ির কোনো না কোনো যন্ত্রাংশ ভেঙে নষ্ট হচ্ছে। ছোট–বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।’
স্থানীয় কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকটা মাস ধরে তাঁরা যে কী বিড়ম্বনার মধ্যে আছেন, তা বলে বোঝানোর মতো নয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতারা, সরকারি লোকজন এ রাস্তার ব্যাপারে জানেন। অথচ কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন (এলজিইডি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৭ মে ৮ কোটি ১৯ লাখ ৬২২ টাকা ব্যয়ে সানটেক-জেএসএমসি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের মুন্সিরহাট এলাকা থেকে শুরু করে আধারা ইউনিয়নের চিতলিয়া-মিনাবাজার হয়ে জাজিরা বালুর মাঠ পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সড়কের কাজ করবে। চলতি বছরের ২৩ নভেম্বর কাজের মেয়াদ শেষ হবে।
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. কমর উদ্দিন বলেন, ‘তারা রাস্তাটির কাজ নিয়ে অনেক গাফিলতি করছে। আমিও এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করি। মানুষের কতটা ভোগান্তি, সেটা আমিও খুব ভালো করে জানি।’
আধারা ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, রাস্তায় চলাচলের দুর্ভোগের কথা বলে শেষ করা যাবে না। মানুষ যে কী পরিমাণ ভোগান্তিতে আছে, যারা এই পথটা ব্যবহার করে, তারা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, এলজিইডিকে বারবার বলার পরেও কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের প্রকৌশলী সফিকুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, সড়কটির জাজিরা থেকে মিনাবাজার পর্যন্ত এখানে প্রায় দুই কিলোমিটার রয়েছে। এ অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকবার চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। এরপরও তারা কাজ করছে না। তবে এখনো তাদের কাজের সময় আছে। মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি।
প্রথম আলো
Leave a Reply