অফিসে চলাকালীন সেখানে না গিয়ে নিজ ভাড়া বাড়িতে ভিজিট নিয়ে রোগী দেখার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। এ নিয়ে এর আগেও অনেক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও তিনি অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার খিদিরপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা হতে দুপুর ২টা পর্যন্ত গিয়ে দেখা যায়, ওই স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা নারগিস বেগমের কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন অফিস কক্ষ তালা দেখে ফিরে যাচ্ছেন।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই কল্যাণ কেন্দ্রে শনিবার, রোববার ও বুধবার চিকিৎসা দেওয়ার কথা নারগিস বেগমের। কিন্তু অধিকাংশ সময় তিনি অফিসে আসেন না।
পরে দুপর সোয়া ২টার দিকে ওই পরিদর্শিকা নারগিস বেগমের মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাট বালিগাঁও গ্রামের ভাড়াটিয়া বাসায় উপস্থিত হলে দেখা যায়, তিনি ওই ভাড়াটিয়া বাসায় রোগী দেখার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার বাসার টেবিলের উপরে রয়েছে সরকারি ওষুধের ব্যাগ। ঘরের মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা দেওয়ার বেডসহ বিভিন্ন সামগ্রী।
স্থানীয়রা বলেন, নারগিস বেগম নিজ বাড়িতে দীর্ঘ সময় রোগী দেখেন। বাড়িতেই নরমাল ডেলিভারি করান। একেকটি নরমাল ডেলিভারি করাতে ৫ হাজার হতে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চার্জ নেন তিনি। এর আগে ওই পরিদর্শিকা টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাটবালিগাঁও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা হিসাবে কর্মরত ছিলেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি তাকে ওই অফিস থেকে বদলি করা হয়। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি ওই অফিস কক্ষে তালা মেরে উধাও হয়ে যান। গত ৬ মার্চ হাটবালিগাঁও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে মমতাজ বেগম নামে একজন যোগদান করলেও তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে তিনি চিকিৎসা সেবা দিতে পারছিলেন না। দীর্ঘ ২ মাসের অধিক সময় ওই কক্ষ তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকায় রোগীরা সেবা বঞ্চিত হয়। পরে এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে অফিস কক্ষের তালা খুলে দিতে বাধ্য হন তিনি।
ওই অফিসের একাধিক সূত্র জানা যায়, নার্গিস বেগমকে বালিগাঁও পরিবার পরিকল্পনা অফিস থেকে বদলি করায় তিনি ক্ষুব্ধ হন। তিনি কিছুতেই এ অফিস থেকে যেতে চাচ্ছিলেন না। পরে এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে তিনি বালিগাঁও ছেড়ে খিদিরপাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে যোগদান করলেও আগের কর্মস্থলের কাছে বাসা নিয়ে আছেন এবং সেখান থেকেই বাসায় বসে টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা নারগিস বেগম বলেন, আমি খিদিরপাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে সপ্তাহে ৩ দিন যাই। আর ৩ দিন বাইরে অন্য কাজ থাকে।
আজতো আপনার ওখানে ডিউটি করার কথা- গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সকালে গিয়েছিলেন বলে জানান। কিন্তু অফিস সময় শুরু থেকেই আপনার কক্ষ তালা মারা ছিল কেন জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দেননি। পরে তিনি বলেন, ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগী কম আসায় আমি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে থেকে বাসায় চলে আসি।
বাড়িতে রোগী দেখার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, অফিস সময়ের পরে আমি বাসায় রোগী দেখি।
আপনি একজন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা হিসাবে রোগী দেখার অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে সে বলে, রোগী না আত্মীয় স্বজন আসে তাদের দেখি। বাড়িতে সরকারি ওষুধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওষুধ নিয়ে ফিল্ডে গিয়েছিলাম বাড়িতে এনে রেখেছি আবার অফিসে যাওয়ার সময় নিয়ে যাব।
এ ব্যাপারে পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আলী আমজাদ দপ্তরি বলেন, আমি খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। যদি এমন হয় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ব.ম শামীম/আরকে
Leave a Reply