নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের চর-মুক্তারপুর এলাকায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার জের ধরে ১৫টি পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এতে দিন ও রাত চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চর-মুক্তারপুর এলাকার বাসিন্দা সোহাগ মিয়া, ইদ্রিস হাওলাদার, ওমর আলী, শামীম বেপারীর ঘরের বিদুৎতের লাইনের সংযোগ তার কাটা অবস্থায় রয়েছে। বিদুৎ না থাকায় পরিবার গুলো তাদের ভাড়াটিয়া মোট ১৫টি পরিবার চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় ব্যাহত হচ্ছে দৈনন্দিন সকল কার্যক্রম।

এছাড়া বিদুৎতের তার কেটে নেওয়ার ভয়ে স্বেচ্ছায় ওই গ্রামের কিরন মিয়াসহ আরও ৬টি পরিবার তাদের বিদুৎতের তার স্বেচ্ছায় খুলে রেখেছেন।

এছাড়াও নির্বাচন পরবর্তী সংহিসতার জেরে সোহাগ মিয়ার পরিবারের ওপর হামলার পর রাতের আধাঁরে তার দুটি ট্রলার চুরি করার ঘটনাও ঘটেছে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চর-মুক্তারপুর গ্রামের শামীম বেপারী ও সোহগ গংদের পরিবার, গেলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় স্বতন্ত্র প্রাথী হাজী ফয়সাল বিপ্লবের নির্বাচন করে আসছিল।

একই সময় তাদের প্রতিবেশী ইসমাইল দেওয়ান, কামাল দেওয়ান, বিল্লাল দেওয়ান, মজিদ, সিরাজ গংরা নৌকা প্রতিকের পরাজিত প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের সমর্থক ছিলেন।

নির্বাচনে স্বতন্ত্র কাঁচি প্রতিকের প্রার্থী হাজী মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব জয়লাভ করলেও ওই এলাকার চর মুক্তারপুর ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস জয়লাভ করে। সেই সূত্র ধরে স্বতন্ত্র প্রাথীর সমর্থক শামীম বেপারী বাড়িতে প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে।

পরে আবারও গত ৮ই জানুয়ারি পুনরায় শামীম বেপারীর বাড়িতে হামলা চালায় ইসমাইল দেওয়ান, কামাল দেওয়ান, বিল্লাল দেওয়ান, জাহিদ, রিশাত, নিহাত, সাকিব, হৃদয়, আকাশ গংরা ২৫ থেকে ৩০ জন।

এ সময় তারা শামীমের ভাবি গর্ভবতী রহিমা বেগম, ভাতিজা তুহিন ও ভাতিজি ইমুকে মারধর করে এবং তাদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এরপর এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে সদর থানায় দুইটি পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়।

পরে একই লোকজন গত ১০ জানুয়ারি সোহাগ মিয়াকে বাড়ির পাশের রাস্তায় একা পেয়ে তার উপর হামলা চালায়। এ সময় সোহাগের মামাতো ভাই শাহ আলম হাওলাদার, শামীম ও আমিন সোহাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।

এ ঘটনায় উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা হলে সোহাগ বাড়িতে না থাকায় গত ১২ জানুয়ারি সোহাগের বাড়ির পাশে শীতলক্ষা নদীতে রাখা দু’টি ট্রলার চুরি করে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন।

পরে গত ৩১ জানুয়ারি রাতে সোহাগের বাড়ির বিদুৎতের লাইন কেটে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন।

সোহাগের মা সালমা বেগম (৫৫) বলেন, আমার ছেলে সোহাগ কাঁচি মার্কার নির্বাচন করায় ইসমাইল, কামাল দেওয়ানরা লোকজন নিয়ে আমার ছেলে সোহাগ ও আমার ভাইস্তাদের মারধর করেছে আমার ছেলের নামে মিথ্যা মামলা দিছে। আমাদের দুইটা ট্রলার চুরি করে নিয়ে গেছে। আমার ছেলে জামিনে এসেও বাড়িতে ফিরতে পারছে না। ওদের ভয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছে। আমাদের বিদুৎতের লাইন কেটে দিছে। আমার বৌ অন্ধকারে না থাকতে পেরে বাবার বাড়ি চলে গেছে। ভাড়াটিয়ারাও বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। আমি ওপেন হার্ট সার্জারির রোগী বাড়িতে একা একা থাকি বিদুৎ নাই রাতে আমার ভয় করে কখন জানি ঘরে একা মরে পরে থাকি।

এদিকে, অপর ভুক্তভোগী শামীম বেপারীর মা রুবিনা বেগম (৭০) বলেন, নির্বাচনের পরের দিন ওরা আমার বাড়িতে এসে আমার ছেলের ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বৌ, নাতি, নাতিনকে মারলো। আমি মারতে না করায় আমার পায়ের মধ্যে লাঠি দিয়ে ওরা আমাকে মারছে। পরে রাতে আমার বিদুৎতের লাইন কেটে দিছে। আমি একমাস যাবৎ অন্ধকারে মোম জ্বালাইয়া থাকি। আমার ৩টা গরু আছে ওরা বলতাছে গরু জোড় কইরা নিয়া যাইবো। তাই রাইতে ঘুমাই না মোম জ্বালাইয়া আমি আর আমার স্বামী গরু পাহারা দেই।

পরে গত ৮ জানুয়ারি রাতে শামীমের বাড়ির বিদ্যুৎ লাইনের তার কেটে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। সে থেকে প্রায় ১ মাস যাবৎ অন্ধকারে আছেন শামীমের পরিবার।

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ঘটনায় পঞ্চসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য শাহ্- আলম হাওলাদার বলেন, নির্বাচন পরবর্তীতে ওরা হেরেও আমার ওপর হামলা, মামলা, লুটপাট চালাচ্ছে ইসমাইল দেওয়ান গংরা। আমার আত্মীয়ের দুইটা ট্রলার নিয়ে গেছে। এখন রাতের আঁধারে বৈদ্যুতিক তার চুরি করছে তারা। এতে রাতে ঘরে থাকা বৃদ্ধা ও শিশুদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

আরও বলেন, ইসমাইল দেওয়ানরা এলাকায় মাদক ব্যবসা ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছেন।

তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইসমাইল দেওয়ান বলেন, আমরা কারও বৈদ্যুতিক তার কাটিনি। প্রয়োজনে আপনারা অনুসন্ধান করে দেখেন। ওরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।

চর-মুক্তারপুর বিদ্যুৎ ফ্রিগেটের একজন কর্মকর্তা নাম বলতে অনিচ্ছুক মুঠোফোনে বলেন, আমাদের বৈদ্যুতিক তার চুরির কোনো ঘটনা জানা নেই। তিনি বলেন, যাদের তার চুরি হয়েছে তারা বৈদ্যুতিক বিলের কাগজ নিয়ে অফিসে আসুক বলে ফোন কেটে দেন।

পরবর্তীতে পুনরায় পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নাম জানা দরকার নেই, প্রয়োজন হলে পঞ্চবটি অফিসে আসেন।

সদর থানার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, এমন ঘটনা ঘটলে থাকলে ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ দায়ের করা উচিৎ অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

ঢাকা মেইল