ইমতিয়াজ বাবুল: একসময় গ্রাম কিংবা শহরে বিয়ের অনুষ্ঠানে কনের আসনে শীতলপাটি ছিল ঐতিহ্যের প্রতীক। বিছানাতেও পাটির ব্যবহার ছিল ঘরে ঘরেই। তবে শীতল পরশ বোলানো পাটির সেই কদর আর নেই আগের মতো। নানা সীমাবদ্ধতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ শিল্পও হারাতে বসেছে জৌলুস। তবু ৩০০ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের ভাটিমভোগ গ্রামের শতাধিক পরিবার। পরিবারগুলো শীতলপাটি বুনেই জীবিকা নির্বাহ করে। পাটিয়ালদের সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় বুনন হয় ঐতিহ্য। তাই গ্রামটিকে সবাই ‘পাটির গ্রাম’ নামে চেনেন।
ভাটিমভোগ গ্রামের পাটিয়ালরা বাপদাদার পেশা হিসেবে এ শিল্পকে ধরে রেখেছেন। পাটি তৈরির প্রধান কাঁচামাল মোতরা নামের এক ধরনের ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। এগুলো সংগ্রহ করতে হয় সিলেট অঞ্চল থেকে। সেখান থেকে এসব কিনে আনার খরচ বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পাটির বাজারমূল্যে। একটি পাটি বুনতে তিন-চারজন কারিগরের দুই-তিন দিন সময় লাগে। একটি পাটি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি করলে লাভ হয় সামান্য। এ শিল্পের জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা নেই। পুঁজির জন্য পাটিয়ালরা দাদন ব্যবসায়ী, মহাজনদের কাছে জিম্মি থাকেন।
বাপদাদার পেশা ধরে রেখেছেন গ্রামের শ্যামল ধর। তিনি বলেন, শতাধিক পরিবার বংশপরম্পরায় এ পেশা ধরে রেখেছে অভাব-অনটনের মধ্যেও। বাজারে এখন শীতলপাটির চাহিদা কম। পাটি তৈরির কাঁচামাল সিলেট থেকে আনতে হয়। এতে খরচ বেড়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে এ শিল্পকে ধরে রাখা সহজ হতো।
৬০ বছর বয়সী হরিপদ ভদ্র জানান, দুই আঁটি মোতরা ছেঁটে ও সরু করে বিভিন্ন আকারের বেতি বানিয়ে বুনন হয় একেকটি পাটি। ২৫০ টাকায় পাওয়া যায় দুই আঁটি মোতরা। এতে প্রতিটি পাটি তৈরিতে খরচ হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, যা পাইকারি বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে। মাত্র ১০০ টাকা মুনাফা করতে হিমশিম খেতে হয়।
মমতা মণ্ডল জানান, স্বামীকে নিয়ে পাটি বুনন করে আসছেন তিনি। এ পাটি বেঁচেই চলেন তারা। তবে এখন আর তেমন লাভ নেই। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারদের অর্ডার আসে। বাজারে গিয়েও কিছু পাটি বিক্রি করেন।
ভবানীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আমিন জানান, বহু আগে থেকেই এ অঞ্চলের মানুষের একটি বড় অংশ শীতলপাটি তৈরি করে আসছিল। কিন্তু নানা কারণে পাটিয়ালের সংখ্যা কমে যাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে এ ঐতিহ্য। তিনি বলেন, ভাটিমভোগ গ্রামের শতাধিক পরিবার কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাটি বুননে ব্যস্ত থাকে। প্রশাসনসহ সবার মিলিত উদ্যোগই পারে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে।
সমকাল
Leave a Reply