কনকসার-নাগেরহাট: খাল দখলে বসতি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান

সোনিয়া হাবিব লাবনী: মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে দখলদারিতে মরে গেছে কনকসার ও নাগেরহাট খাল। কনকসার খাল ভরাট করে পাঁচ শতাধিক বসতি করার সুযোগ করে দিয়েছে সাবেক এমপি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির ছত্রচ্ছায়ায় থাকা আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী মহল। হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এ ছাড়া খালের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণসহ দুই সহস্রাধিক দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ভাড়া উঠিয়েছে দখলদাররা।

একই অবস্থা নাগেরহাট খালের। এই খালের তিন হাজার ৪৩৫ মিটার অংশের প্রবাহ ফেরাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৬৭ লাখ ৩২ হাজার ৯৮ টাকা ব্যয় করে। কিন্তু তাতেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না কৃষক ও স্থানীয়রা।
কনকসার ও নাগেরহাট খালের উৎপত্তি পদ্মা নদী থেকে।

একসময় খাল দুটি দিয়ে লঞ্চ, ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযান চলত। বিস্তীর্ণ এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল দুটি ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়াই দায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, খাল ভরাট করে বসতি স্থাপনের সুযোগ করে দেয় কনকসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ, কনকসার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. মনির হোসেন মাস্টার, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মেহেদী হাসান বেপারী, লৌহজং উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মোড়ল, জেলা ছাত্রলীগের নেতা রাজু খানসহ বেশ কয়েকজন নেতা।

তাঁরা সবাই পুরো খালটি দখল করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। খালের জায়গায় নির্মাণ হয়েছে বহুতল ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

কনকসার খালের ওপর বাড়ি নির্মাণকারী সুলতান ফকির বলেন, ‘এখানে বসবাস করার জন্য আমাকে টাকা দিতে হয়েছে। খালে যারা বালু ভরাট করেছে, আমি তাদের এক লাখ টাকা দিয়েছি। কেউ কেউ ৬০ থেকে ৮০ হাজার করে টাকা দিয়ে এখানে থাকার সুযোগ পেয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি জায়গায় বালু ভরাট করে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে। লৌহজংয়ের ঘোরদৌড় বাজার থেকে কনকসার বাজার পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক পরিবার নিরুপায় হয়েই বালু ভরাটকারীদের টাকা দিয়েছে।’

অন্য এক বাসিন্দা গীতা রানী জানান, নদী ভাঙনকবলিত শত শত পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে আওয়ামী লীগের লোকজন। খালের ওপর যত বসতবাড়ি আছে, তারা সবাই টাকার বিনিময়ে যার যার পজিশন বুঝে নিয়েছে। আমি তিন শতাংশ জায়গায় বসবাস করছি, এ জন্য আমাকে ৭০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।

স্থানীয় কৃষক আলমগীর মোল্লা বলেন, গত বছর নাগেরহাট খালটি খনন করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরও আমরা জমিতে সেচ দেওয়ার পানি পাচ্ছি না। প্রশস্ত খালটির প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে দখল হয়ে যাওয়াতে বর্ষা ছাড়া কোনো পানি খালে প্রবেশ করেতে পারে না। পানির কারণে ধান, পাট কোনোটাই ফলন করতে পারছি না।

নাগেরহাট খাল তীরবর্তী বাসিন্দা মোশারফ হোসেন বলেন, যে সরকার ক্ষমতায় আসে তাদের লোকজনই খাল দখল করে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যার কারণে বছরের পর বছর ধরে খাল দখল কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নেছার উদ্দিন জানান, এরই মধ্যে বিদ্যমান যে খালগুলো ছিল সেই খালগুলোর ওপর জরিপ শুরু করেছি। সে অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং খালগুলোকে আগের অবস্থায় নিয়ে যাব। খালকে প্রবাহমান রাখতে যা করণীয় তা আমরা করব।

কালের কন্ঠ

Leave a Reply