লৌহজংয়ে নির্বাচন জমে উঠেছে ॥ প্রার্থীরা দ্বারে দ্বারে

ভোটগ্রহণ ১১ জুন
লৌহজংয়ে জমে উঠেছে ইউপি নির্বাচন। রাতদিন পাড়া-মহল্লায় গিয়ে প্রার্থীরা উঠোন বৈঠক করছেন। নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর পৰে এ সকল বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ইউনিয়ন এমনকি উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীরা মরিয়া হয়ে ভোটের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। গভীর রাত অবধি প্রার্থীদের এই ছুটে চলা। নতুন আর পুরনোর লড়াইয়ে এখানকার নির্বাচন উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। নির্বাচনের বিশেষ এক পরিবেশ এখন পদ্মা তীরের লৌহজংয়ে। মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী এই জনপদের নির্বাচনে নগদ টাকার ছড়াছড়ি চলছে। রবি, সোম ও মঙ্গলবার এলাকা ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

আগামী ১১ জুন এ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে বৌলতলী ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনোনয়োনপত্র প্রত্যাহার করায় এ ইউনিয়নে নূর হোসেন শিকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তবে সংরৰিত মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পাশাপাশি ১০টি ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৯৮ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৮১ জন প্রার্থী দিন-রাত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে উন্নয়নের ও সামাজিকভাবে সহযোগিতার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে ভোটপ্রার্থনা করছেন।

মেদিনীমন্ডল ইউনিয়ন ॥ আওয়ামী লীগের সভাপতি রাশেদুল হক মুন্না, সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপিপন্থী আলহাজ মোঃ আবু ইউসুফ এবং বিএনপির একাংশের সমর্থনে মাসুদুর রহমানের মধ্যে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে রাশেদুল হক মুন্না ভোটারদের হিসাবে এগিয়ে আছেন। মাওয়া ফেরিঘাট এই ইউনিয়ন এলাকায়। তাই এই ইউনিয়ের গুরম্নত্ব অনেক বেশি। পদ্মা সেতুও হচ্ছে এই এলাকার ওপর দিয়েই। তিন চেয়ারম্যানপ্রার্থীই মরিয়া হয়ে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন। মেম্বার প্রার্থীরাও বসে নেই।

কুমারভোগ ইউনিয়ন ॥ এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নূর ইসলাম খান ও মোঃ লুৎফর রহমান তালুকদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নূর ইসলাম খান এ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত একজন প্রভাবশালী প্রার্থী। অপরদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ ওসমান গনি তালুকদারের ছোট ভাই মোঃ লুৎফর রহমান তালুকদার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হওয়ায় এ ইউনিয়নের নির্বাচন জমে উঠেছে। তবে ভোটের ৰেত্রে এ ইউনিয়নের বেদে (যাযাবর) সম্প্রদায়ের ভোট জয়-পরাজয়ে বিশেষ একটি ভূমিকা রাখে। কথিত আছে ভোটের আগের দিন এ বেদে সম্প্রদায়ের সর্দাররা বেচা-কেনা হয়ে থাকে। আর সর্দার যে দিকে ভোট দিতে বলে বেদে সম্প্রদায়ের লোক সেদিকেই ভোট দেয়। তাই বেদেদের জোটবদ্ধ ভোট এখানে বিশেষ গুরম্নত্ব বহন করে।

লৌহজং-টেউটিয়া ইউনিয়ন এ ইউনিয়নে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হলেও মূলত লড়াই হবে দ্বিমুখী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গিয়াস উদ্দিন বেপারি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ ফকির, মোঃ আব্দুল হামিদের পুত্র ফকির মোঃ আবু ফয়সাল নিপুর মধ্যে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। গিয়াস উদ্দিন বেপারি দু’দফায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এবার তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পৰানত্মরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পুত্র ফয়সাল তার বাবার রাজনৈতিক ইমেজের কারণে এখানে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে পারিবারিক কারণে এখনও সুবিধাজনক অবস্থায় গিয়াস উদ্দিন বেপারি। এ ইউনিয়নের অপর দুই প্রার্থী হচ্ছেন মোঃ জামাল হোসেন ও মোঃ সামাদ সর্দার।

হলদিয়া ইউনিয়ন এখানে তিনজন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাজী মোঃ মহসিন গাজী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল উদ্দিনের মধ্যে। অপর প্রার্থী রয়েছেন মুরাদ পারভেজ দুলাল। এছাড়া বোমা নাটকের কারণে মোঃ মহসিন গাজী এলাকায় প্রশ্নবিদ্ধ। পুলিশ জানিয়েছে তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপের ঘটনাটি রহস্যজনক।

কলমা ইউনিযন ॥ এখানে মোট ৬ প্রার্থী নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। এরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বলে পরিচিত আব্দুল মালেক মিয়া (মালেক মাস্টার), বিএনপিপন্থী সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ জহিরম্নল ইসলাম, মোঃ নবীন হোসেন চাকলাদার, মোঃ শাহ আলম বাহার ও মোঃ গুলজার হোসেন। তবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বলে পরিচিত আব্দুল মালেক মিয়ার সঙ্গে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোঃ জহিরম্নল ইসলামের সঙ্গে হবে ভোটের আসল লড়াই।

কনকসার ইউনিয়ন ॥ এখানে ৫ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও মোঃ এমদাদ হোসেন ঢালী তাঁর প্রার্থিতা পদ প্রত্যাহার করেছেন। বাকিরা হলেন সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মোঃ আবু বকর ঢালী, সাখাওয়াত হোসেন রোমেট, আবুল কালাম আজাদ ও মোঃ বিদু্যৎ আলম প্রার্থী। তবে বিদায়ী চেয়ারম্যান আবু বকর ঢালীর প্রতিদ্বন্দ্বী তেমন কোন শক্ত প্রার্থী না থাকায় এখনও সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। তবে এখানে এক প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতার প্রচারে অংশগ্রহণ সমালোচনার ঝড় তুলেছে।

গাওদিয়া ইউনিয়ন ॥ আওয়ামী লীগ নেতা জিএম কবির এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন গতবারের বিজয়ী চেয়ারম্যান বিএনপিপন্থী মোঃ নাদের খানের সঙ্গে।

খিদিরপাড়া ইউনিয়ন ॥ ডা. মতিউর রহমান, মোঃ শাহ নেওয়াজ মৃধা, জাহাঙ্গীর মোলস্না ও আবুল কালাম আজাদসহ মোট ৪ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানেও নির্বাচন জমে উঠেছে। প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছে এলাকা।

বেজগাঁও ইউনিয়ন ॥ হাজী মোহাম্মদ আমির হোসেন তালুকদার, মোঃ ইকবাল হোসেন তালুকদার, মোঃ ফিরোজ আহম্মদ মোলস্না, হাজী নূর মোহাম্মদ খান ও মিজানুর রহমান লিটন মোলস্নাসহ চেয়ারম্যান পদে মোট ৫ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। তবে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পৰে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

Leave a Reply