মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চর জানাজাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ফের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিমানবন্দরটি নির্মাণের পদক্ষেপ নিতে এরই মধ্যে বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ৮ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ’ প্রকল্পটি নির্মাণের উদ্দেশ্যে বিস্তারিত সম্ভব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নীতিগত সিদ্বান্ত প্রদান করেন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ, ড্রইং, ডিজাইন প্রণয়ন ও স্থান নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে পরামর্শক নিয়োগ করা প্রয়োজন মনে করছে সরকার। এই প্রেক্ষিতে পিপিপি’র আওতায় বাস্তবায়িতব্য ওই প্রকল্পের জন্য পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য এ সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ চলতি কিংবা আগামী সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চরজানাজাতে নির্মাণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। বিমানবন্দরের জন্য ওই স্থান চূড়ান্ত করা হবে বলে নির্বাচন-পূর্ব এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা ওই সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের একমাত্র ব্যস্ততম বিমানবন্দর। বাংলাদেশে বিদেশ থেকে আগত এবং এদেশ থেকে বিদেশগামী মোট বিমান যাত্রীর প্রায় শতকরা ৮০ ভাগই এ বিমানবন্দর ব্যবহার করে থাকে। বর্তমানে বিমানবন্দরটির মাধ্যমে বাৎসরিক প্রায় ৪৫ লাখ যাত্রী যাতায়ত করে থাকেন এবং প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন কার্গো বিমান পথে পরিবহন করা হয়ে থাকে।
বর্তমানে এ বিমানবন্দরে বাৎসরিক প্রায় ৬০ লাখ যাত্রী এবং ৪ লাখ মেট্রিক টন কার্গো পরিবহনের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর শতকরা ৮ ভাগ হারে যাত্রী এবং শতকরা ১২ ভাগ হারে কার্গো পরিবহন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উল্লেখিত হারে যাত্রী ও কার্গো পরিবহন বৃদ্ধি পেলে ২০১৮ সাল নাগাদ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমনাবন্দর সর্বমোট প্রায় ৬০ লাখ যাত্রী ও ৪ লাখ কার্গো পরিবহন করবে এবং পরবর্তীতে ওই বিমানবন্দর বর্ধিত যাত্রী কিংবা কার্গো পরিবহনের ক্ষমতা হারাবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সমীক্ষা মতে আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ সর্বেমোট যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা হবে প্রায় ১ কোটি এবং কার্গো পরিবহনের পরিমান হবে প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন। স্বাভাবিকভাবেই এ বর্ধিত যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের মত প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা বর্তমানে এ বিমানবন্দনে নেই। এছাড়াও সেনানিবাস ও বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী আবাসিক এলাকা দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়ায় এ বিমানবন্দরকে সম্প্রসারণ করার সুযোগও সীমিত। এই প্রেক্ষাপটে বিমান চলাচল ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের বর্ধিত চাহিদা পুরণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে একটি আধুনিক বিমানবন্দর নির্মাণ করা একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চ্যত্যের সংযোগস্থল হিসেবে বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতকরণের নিমিত্তে সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আন্তর্জাতিক মানের একটি বিমানবন্দর নির্মাণের নীতিগত সিন্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
সারসংক্ষেপে আরো বলা হয়, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে একটি আধুনিক বিমানবন্দরের প্রয়োজনীতা রয়েছে। তাই সরকার প্রতিশ্রুত এ প্রকল্পের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় হতে ঢাকার সঙ্গে উত্তম যোগাযোগ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে দেশের বিভিন্ন জায়গা সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক স্থান নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। উপযুক্ত স্থান নির্বাচনের লক্ষ্যে মোট ৯টি স্থানকে প্রাথমিক ভাবে নির্বাচন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রস্তুত করা ওই সারসংক্ষেপে আরো বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান বিমানযাত্রী ও কার্গো পরিবহণের চাহিদার নিরীখে ১৪৫০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে তিনটি রানওয়ে বিশিষ্ট এয়ারপোর্ট নির্মাণ করা প্রয়োজন। এজন্য আনুমানিক প্রায় ৮ হাজার একর জমির প্রয়োজন হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ১০ বছর মেয়াদে আনুমানিক প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। তবে পরামর্শক নিয়োগপূর্বক প্রকল্পের বিস্তারিত ফিজিবিলিটি ষ্ট্যাডি সম্পাদনের পর ড্রইং-ডিজাইন চূড়ান্ত হলে প্রক্কলিত ব্যয় ও জমির পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটি পিপিপি’র মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সিন্ধান্ত রয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্প প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার এই বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়। সে সময় বিমানবন্দরের জন্য সম্ভাব্য তিনটি স্থান চিহ্নিত করা হয়। স্থানগুলো হলো ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ত্রিশাল, আমিরাবাড়ী, মোক্ষাপুর এবং মঠবাড়ী ইউনিয়নের দুই হাজার ৬০০ হেক্টর জমি। দ্বিতীয়টি ত্রিশাল উপজেলার রামপাল, কানিহারী, কাঁঠাল ও বৈলা ইউনিয়নের দুই হাজার ৬০০ হেক্টর জমি। তৃতীয়টি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকায় নদী তীরবর্তী চর এলাকা। তৎকালীন সরকার সম্ভাব্য স্থানের প্রথমটি অধিক বিবেচনায় নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলেও স্থান নির্ধারণ নিয়ে নানা সমস্যা দেখা দেয়। স্থান নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয় জনগণ প্রতিবাদ করে মিছিল-সমাবেশ করায় ওইসব স্থানে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। এর পর মুন্সীগঞ্জের আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। কিন্তু স্থানীয়দের বিরোধিতার কারণে তা বাতিল হয়। পরে বিমানবন্দরের জন্য কেয়াইন, চরবিলাসপুরসহ আটটি স্থান চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করা হয়। বাকি ছয়টি স্থান হলো- মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, মানিকগঞ্জের সিংগাইর, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চরজানাজাত ও রাজৈর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা এবং গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বাঘিয়ার বিল।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক নকশা অনুযায়ী প্রায় ছয় হাজার একর জমি নিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে। বিমানবন্দরে নয় হাজার ফুট করে মোট তিনটি রানওয়ে থাকবে। আধুনিক জাম্বো বিমান এয়ারবাস-৩৮০ চলাচলে সক্ষম রানওয়ে দুটি ও অবতরণের জন্য তৃতীয় রানওয়ে থাকবে। এছাড়াও সমান্তরাল ট্যাক্সিওয়ে ও অ্যাপ্রন, তিন লাখ যাত্রী পরিবহনের সুবিধাসম্পন্ন প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল কমপ্লেক্স, পর্যাপ্তসংখ্যক গেট, ডিউটি ফ্রি শপ, এনার্জি সাশ্রয়ী উপাদান, পাঁচতারকা হোটেল ও তিনতারকা ট্রানজিট হোটেল, পর্যাপ্ত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার, আধুনিক ও সমন্বিত নিরাপত্তা সিস্টেম এবং টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক থাকবে। রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য নির্মাণ করা হবে রেল ও বাস এক্সপ্রেস। পাশাপাশি রয়েছে এয়ারপোর্ট কমার্শিয়াল সিটি, বহুতল কার পার্কিং ব্যবস্থা, কার্গো ভিলেজ, এয়ারক্রাফট ব্যবস্থাপনা হ্যাঙ্গার, বিজনেস সেন্টার, ট্যুরিস্ট স্পট, পাওয়ার স্টেশন, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও অন্যান্য সিস্টেম। বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি স্যাটেলাইট সিটিও তৈরি করা হবে। এতে থাকবে গৃহায়ন, এমিউজমেন্ট, শপিংমল, খেলার মাঠ ইত্যাদি সুবিধাদি সমন্বিত আধুনিক পরিকল্পিত নগর।
শীর্ষ নিউজ
shalara airport nirman korba koro, kintu BD passport nea bideshe gele ekhon transit visa o paowa jai na. Shorkarer uchit visa exemption kora unnoto desher shate. j obostha desher koidin pore malaysia transit daowa off koira debo.