মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বলঃ মুন্সীগঞ্জের মেঘনা, ধলেশ্বরী, ইছামতি, কাজলরেখা, রজতরেখা ও পদ্মা নদী দখলের মহোৎসব চলছে। সরকারি হিসাবে জেলার চার উপজেলায় রয়েছে ১শ ১৩ দখলদার। নদী দখলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। প্রশাসন বলছে, দখলদারদের চিহ্নিত করে উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া চলছে। মুন্সীগঞ্জ জেলার নদীর মোট আয়তন ১শ ৬ বর্গকিলোমিটার। নদী দখলের কারণে মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ-সদরঘাট নৌপথ যেমন সরু হচ্ছে, একই সঙ্গে পরিবেশে পড়ছে নানা রকম নেতিবাচক প্রভাব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মেঘনা নদীর বিশাল এলাকা দখল হয়ে গেছে। গজারিয়া উপজেলার নয়ানগর মৌজার বিশাল নদী এখন শিপইয়ার্ডের পেটে। দখলদার চিহ্নিত হওয়ার পরও বালু ফেলে ভেকু মেশিন ব্যবহার করে প্রকাশ্যে চলছে দখল। দেখার যেন নেই কেউ।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মিরেশ্বরাই মৌজায় ক্রমেই ছোট হচ্ছে ধলেশ্বরী। আর বড় হচ্ছে এই সিমেন্ট কারখানা। নদী রক্ষা কমিশনের ওয়েবসাইটে নদী দখলকারীদের তালিকা প্রকাশের পরও থামছে না তাদের মহোৎসব। বরং দখলের পরিধি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

শীতলক্ষ্যা, ইছামতি, কাজলরেখা, রজতরেখা ও পদ্মা নদীতেও দখলের রাজত্ব। মুন্সীগঞ্জের সদর, গজারিয়া, টঙ্গীবাড়ি ও লৌহজং এই চার উপজেলায় জেলা প্রশাসনের সবশেষ তালিকায় ১শ ১৩ জন দখলদারের নাম রয়েছে। দীর্ঘদিনেও উচ্ছেদ না হওয়ায় বিপর্যস্ত জীববৈচিত্র্য। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) মুন্সীগঞ্জের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান বলেন, মুন্সীগঞ্জের পদ্মা, মেঘনাসহ বিভিন্ন নদী দখলের যে মহোৎসব চলছে, এর ফলে আমাদের জীবন-জীবিকা, আবহাওয়া, যোগাযোগ সবকিছু মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। ধলেশ^রীতে বিভিন্ন কারখানার ব্যাপক বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। জলজ প্রাণী, মাছ মরে ভেসে উঠছে।

অবৈধ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর নাব্য নষ্ট হচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম ভেঙে যাচ্ছে। পদ্মা, মেঘনা ধলেশ^রী আমরা তিনটা জায়গায়ই বিরূপ পরিস্থিতির শিকার। নদীর প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে বেআইনি দখল উচ্ছেদ করতে হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তার সঙ্গে অন্যায় যোগাযোগের কারণে দখলকারীরা এত দাপটে, এত দম্ভে, বেপরোয়াভাবে নদী দখল করছেই, দূষণ করছেই। তিনি এ অবস্থায় অবিলম্বে নদীর দখল-দূষণ বন্ধ এবং কারখানাগুলোতে ইটিপি স্থাপন করে দূষণ রোধ করা এবং নদীর সীমানা নির্ধারণের জোর দাবি জানান।

বাবু লাল বৈদ্য বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জের উপপরিচালক, (নৌ নিরাপত্তা) তিনি বলেন, নদীর দখলদার চিহ্নিত করে উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া চলছে। নদী দখলের কারণে নৌপথে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে, মাছের প্রজননে ব্যাঘাত ঘটছে। পানি দূষণের ফলে নদী তীরবর্তী মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ¯েœহাশীষ দাশ বলেন, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন নদীর তীরে যে অবৈধ স্থাপনাগুলো রয়েছে তার তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী নদী রক্ষা কমিশন এবং মহামান্য হাইকোর্টের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা অনেকগুলো অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছি। এ ছাড়াও যে অবৈধ দখল রয়েছে আমরা ধারাবাহিকভাবে সেগুলোর উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

জনকন্ঠ