‘গণসদন হল’ এখন ভুতুড়ে বাড়ি

মুন্সীগঞ্জ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ধারক-বাহক গণসদন হলটি পরিত্যক্ত এখন ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। দেড়যুগ আগেও উৎসবমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ ছিল এ গণসদন হলটি। সপ্তায়ে ৪/৫ দিন মঞ্চায়িত হতো বিখ্যাত সব নাটক। দেশে-বিদেশের বিখ্যাত নাট্যশিল্পীরা অভিনয় করতে আসতেন। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে নাটক দেখতে শত শত দর্শকের লাইন লেগে থাকতো এই স্থানটিতে।

গণসদন হলটি মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র মালপাড়া এলাকায় থানার পশ্চিম পাশে অবস্থিত। পাকিস্তান আমলের নির্মিত এ ভবনটি স্বাধীনতার আগে প্রশাসনিক কর্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ১৯৭৯ সালে তৎকালীন সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ‘গণসদন’ নাট্যমঞ্চ নাম দিয়ে হলটির উদ্বোধন করেন। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই হলটি।

স্থানীয় ও সাংস্কৃতি কর্মীরা জানান, ঐতিহ্যবাহী গণসদন হলটি মুন্সীগঞ্জের সাংস্কৃতিক চর্চা ও নাট্য আন্দোলনের প্রধান চারণভূমি ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কয়েকটি প্রজন্মের প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার প্রসার ঘটেছিল এ গণসদন হলকে কেন্দ্র করে। জাতীয় পর্যায়ের নাট্য আন্দোলনের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয় নাট্য সংগঠনগুলো গণসদনের নাট্যমঞ্চে নাট্যচর্চা ও সৃজনশীল নাট্য আন্দোলনকে গতিশীল করেছিল।

এ মঞ্চে রক্তকরবী, কবর, কঞ্জুস, নূরুলদিনের সারাজীবন, মা, হীরক রাজার দেশে, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, ওরা কদম আলী, এক পেয়ালা কফি, জমিদার দর্পন, সুজন বাদিয়ার ঘাট, নকশী কাথার মাঠ, ১৯৭১, মানুষ এবং, নতুন মানুষ, প্রত্যাশিত প্রলাপ, এখন দুঃসময়, বাসন, ইতিহাস কাদে এমন অনেক জনপ্রিয় মঞ্চ নাটক নিয়মিত মঞ্চায়ন হতো।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, হলের দেয়ালের বিভিন্ন অংশ খসে পড়েছে। দেয়ালের লতা পাতা পেচিয়ে রয়েছে। অনেক স্থান ভেজা শ্যাওলা গজিয়েছে। কোথাও কোথাও দেয়ালের উপরে ছোট ছোট গাছ লতা পাতার সঙ্গে আলিঙ্গন করে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়, হলের উপরের ছাদ খোলা। মঞ্চ থেকে শুরু করে সব কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। কক্ষের মেঝেতে আধাহাত পানি। পানিতে মশা গিজগিজ করছে। সেখানে আশপাশের বাড়ি ময়লার-আবর্জনার স্তূপ। হরেক রকম আগাছা। সব মিলিয়ে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়েছে এক সময়কার জাঁকজমকপূর্ণ হলটির। জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে সর্বশেষ গণসদন হলটি সংস্কার করা হয়। ২০০৭ সালে রহস্যজনকভাবে এক রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে হলটির পুড়ে নষ্ট হয়ে যায় ব্যবহারের সবকিছু। এরপরে থেকে সাংস্কৃতিক চর্চা থমকে যায়। বন্ধ হয়ে যায় নাট্য আয়োজনসহ সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মুন্সীগঞ্জ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি এডভোকেট সুজন হায়দার বলেন, গণসদন হলটি মুন্সীগঞ্জের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্মদাতা। এই স্থান থেকে মুন্সীগঞ্জের সাংস্কৃতিক চর্চা শুরু হয়। অযত্ন, অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে গণসদন হলটি এখন জরাজীর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে আছে। গণসদন হলকে পুনঃসংস্কার হলে সাংস্কৃতিক চর্চা আরও বেগবান হবে। সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রাণের দাবি হলটিকে পুনরায় সংস্কার করা হোক। এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসূল বলেন, সংস্কৃতি চর্চায় হলটি সংস্কার অথবা পুনঃনির্মাণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার সে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে।

মানবজমিন

Leave a Reply