কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু: শাকসবজি উৎপাদনের জন্য খ্যাতি রয়েছে মুন্সীগঞ্জ জেলার। সদরের বজ্রযোগিনী বাজার ও রামশিং বাঁশপট্টিতে প্রতিদিন পাইকারি দামে বেচাকেনা চলে। এখন গ্রীষ্মকালীন সবজিতে পরিপূর্ণ বাজার, চলছে বেচাকেনা। কৃষকেরা জমি থেকে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি তুলে ভোরে পাইকারি বিক্রি করছেন। এ বাজার থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। ভালো মানের সবজি রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশে। তবে দাম নিয়ে খুশি নন কেউ।

কৃষক ও আড়তদাররা বলছেন, এবার সবজি চাষ শুরুর পর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় উৎপাদন ভালো হয়নি। মুন্সীগঞ্জের সবজি কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে পাইকাররা এসে এসব সবজি কিনে সরাসরি দেশের বাইরে পাঠান। বিমান ভাড়া বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।

বজ্রযোগিনী গ্রামের সবজি চাষি মিজানুর রহমান বলেন, এ বছর সবজি চাষ মৌসুমে বৃষ্টি হয়নি। ফলে ফলন কম হয়েছে। এখন দিন দিন কমছে সবজির দাম। এতে লোকসান হবে। একই গ্রামের আলামিন হোসেন বলেন, সার, বীজ, কীটনাশকের দাম বেশি। সবজিক্ষেতে মাচা বানাতে বাঁশ ব্যবহার করা হয়। বাঁশের দামও প্রচুর। অথচ সবজির দাম নেই। সরকারি সহযোগিতা না পেলে সবজি উৎপাদন করা সম্ভব হবে না।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল, মহাকালী ও বজ্রযোগিনী ইউনিয়ন এবং টঙ্গিবাড়ীর ধামারণ, আলদী, কাঠাদিয়া, সোনারং, ধীপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা সবজি উৎপাদন করেন। ভোরে জমি থেকে করলা, লাউসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বজ্রযোগিনী ও রামপাল ইউনিয়নের বাঁশপট্টি পাইকারি বাজারে নিয়ে আসেন। এ দুটি বাজারে প্রতিদিন সকাল ৫টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সবজি বেচাকেনা হয়।

জানা গেছে, বাজার কাছাকাছি হওয়ায় কৃষকের পরিবহন খরচও গুনতে হয় কম। করলা ছাড়াও লাউ, জালি কুমড়া, জিঙা, কহি, ধুন্দল, শসাসহ গ্রীষ্মকালীন সব ধরনের সবজি পাওয়া যায় এ বাজারে। তবে বারো মাসই বাজার দুটিতে নানা ধরনের সবজি বেচাকেনা হয়।

সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের শাঁখারীবাজার গ্রামের মো. জামালউদ্দিন বজ্রযোগিনীর সবজির হাট থেকে দিনে অন্তত ১০ মণ বিভিন্ন ধরনের সবজি কেনেন। এর মধ্যে কিছু করলা দুবাইয়ে পাঠাচ্ছেন। একটি প্যাকেটে চার কেজি করে করলা রাখা হয়। তিনি জানান, ঢাকার আলী হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীকে তিনি এ সবজি সরবরাহ করেন। আলী হোসেনের মাধ্যমে এ করলা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন বিকেলের ফ্লাইটে দুবাইয়ে যায়।

জামালউদ্দিন আরও জানান, ময়মনসিংহ, শেরপুর, মেহেরপুর, বগুড়ার আক্কেলপুর ও ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে করলা সংগ্রহ করে তিনি সারা বছরই দুবাইয়ে পাঠান। ধামারণ গ্রামের কৃষক আলম শেখ বলেন, এ অঞ্চলের উৎপাদিত সবজি ঢাকা, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান।

পাইকারি ক্রেতা জামাল হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর বিদেশে সবজি রপ্তানি হচ্ছে। এ বছর একবার শুধু ওমানে সবজি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বিমান ভাড়া বেশি হওয়ায় ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকা যাচ্ছে না। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে বিমান ভাড়া দেড়গুণ। আরেক পাইকার জয়নাল হোসেন বলেন, দেশের সবজির বিদেশে চাহিদা থাকলেও বিমান ভাড়ার কারণে প্রতিযোগিতায় ভারতের সঙ্গে টেকা যাচ্ছে না।

মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল আজিজ বলেন, সদরের বজ্রযোগিনী ও রামশিং বাজারে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির বিক্রির উৎসব চলে। স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এ দুটি পাইকারি বাজার থেকে করলা বিদেশেও রপ্তানি হয়। কয়েক’শ ট্রাক শাক-সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়।

সমকাল