মিরকাদিমের রিকাবী বাজার খালটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। দীর্ঘদিন ধরে পৌর কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আর উদাসীনতায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবৈধ দখল দৌরাত্ম্য আর যত্রতত্র ফেলা ময়লা আবর্জনায় বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে পৌর এলাকার এই প্রধান খালটির। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে একসময়ের দ্বিতীয় কলকাতা হিসেবে পরিচিত কমলাঘাট বন্দরের নৌপথের বাণিজ্যিক কার্যক্রম।

এর আগে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা দুইদিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তখন উচ্ছেদ করা হয় খালের দুই পাড় দখল করে গড়ে ওঠা প্রায় সাড়ে চার শতাধিক বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। সে সময় খালের একপাশে

ওয়ার্কওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হলেও তা আধৌ বাস্তবায়ন করা হয়। তৎকালে ওয়াক ওয়ে নির্মাণের জন্য খালের পাশে পূর্ব পাড়া জামে মসজিদের ওয়ুখানার সেমিপাকা স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হয়।কিন্তু আজও হয়নি ওয়াক ওয়ে নির্মাণ।

খালটি খনন করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা নেয়া হলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি এখনো। এদিকে আবারও খালের বিভিন্ন অংশ ফের দখলে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ইতোমধ্যে খালটির প্রবেশ মুখে ময়লা আবর্জনা ফেলায় বন্ধ হয়ে গেছে পানি প্রবাহ। এতে খালটি পরিণত হয়েছে নালায়। ময়লা আর্বজনার গন্ধে ছড়াচ্ছে নানা রকম রোগ।

স্থানীয়রা জানান, মাত্র দেড় যুগ আগেও খালটিতে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক ছিল প্রায় ৯৫ শতাংশ অংশে। ফলে ছোট ও মাঝারি যে কোনো ধরনের নৌযান সহজে মালামাল নিয়ে ধলেশ্বরী নদী থেকে খালটিতে প্রবেশ করে সরাসরি এসে নোঙ্গর করতে পারত কমলা ঘাট বাণিজ্যিক বন্দরে। তবে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে স্বচ্ছ জলরাশির প্রবাহমান খালটি এখন মৃতপ্রায়। সরেজমিনে খালটির বিভিন্ন অংশে ঘুরে দেখা যায়, ধলেশ্বরী নদীর তীরে খালটির উৎপত্তিস্থলের মূল অংশেই দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ঘরবাড়ি। এতে দীর্ঘ সময় ধরে খালটির পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় ঝোপঝার আর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। খালটির এক পাশের প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে ছোট বড় বহুতল নানা স্থাপনা আর অন্য পাশে দেখা গেছে ফার্নিচার তৈরির কারখানা ও অসংখ্য কাঠের দরজা জানালা বিক্রির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ স্থাপনার মালিকরা ধীরে ধীরে একটু একটু করে দখল করে নিচ্ছে খালটির বিভিন্ন অংশ।

খালটির পানি প্রবাহের আরেক প্রবেশ পথ রিকাবিবাজার নৈদিঘির পাথর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ময়লা ফেলে আবর্জনার স্তূপ তৈরি করে রাখায় বন্ধ হয়ে আছে ধলেশ্বরী নদী থেকে সরাসরি খালটিতে পানি প্রবাহ। ফলে ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট ট্রলার ও বিভিন্ন নৌযান খালটিতে প্রবেশ করতে না পেরে পাশেই নোঙ্গর করে রেখেছে। ময়লা ফেলে আবর্জনার স্তূপ তৈরি করা হয়েছে খালটির বিভিন্ন অংশে। এতে মারাত্মক দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে পথচারীসহ স্থানীয়দের।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পানি প্রবাহ স্বাভাবিক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ময়লা পানি আটকে থাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়াও ময়লা আবর্জনার স্তূপ থেকে রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে। এতে ঘরে ঘরে বেড়েই চলেছে অসুস্থ্যতা। রিকাবী বাজারের কিছু মুরগি ও গরু মাংস ব্যবসায়ী মুরগি ও গরুর অপ্রয়োজনীয় জিনিসাদি এই খালে ফেলে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা ফেলে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করেছে। এতে নীরব রয়েছে পৌরসভার পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। পৌরসভার কোন নজর নেই।

মিরকাদিমের পৌর মেয়র আব্দুস সালাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খালটিতে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকায় বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুন্সীগঞ্জের মানুষ। এর আগে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে প্রায় সাড়ে চারশর মতো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও ফের দখল করে নিচ্ছেন অনেকেই। বিষয়টি আমরা তালিকা করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অবহিত করেছি এবং শীঘ্রই খালটি পুনরায় খননের অনুরোধ জানিয়েছি।

নিউজজি