মুন্সিগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে সংঘর্ষে জড়িয়েছে মুন্সিগঞ্জ পৌর মেয়র ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থকেরা। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে শহরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন মুন্সিগঞ্জ পৌর মেয়র ফয়সাল বিপ্লব পক্ষের আবদুল মালেক, মো. জামাল, ফয়সাল সোহাগ, রাসেল, সাদ্দাম, আফসার হোসেন, সুমন,আবুল কালাম, সালাউদ্দিন। তাঁরা সবাই গজারিয়া উপজেলার বাসিন্দা। সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসের পক্ষের আহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন। তিনি পৌর কাউন্সিলর মকবুল হোসেনের ভাই।

পৌর মেয়র ফয়সাল বিপ্লব জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিনের ছেলে। মুন্সিগঞ্জ-৩ (মুন্সিগঞ্জ সদর ও গজারিয়া) আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে গত দুইবার নৌকার মনোনয়নে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মৃণাল কান্তি দাস। সম্প্রতি আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পৌর মেয়র ফয়সাল বিপ্লব। এ নিয়ে এ দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। এত দিন দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব চাপা থাকলেও নির্বাচন সামনে রেখে তা প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে।

মুন্সিগঞ্জে পৌর মেয়র ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত কয়েকজনকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায়ছবি: প্রথম আলো

প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার শহরের প্রধান সড়কে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন পৌর মেয়র ফয়সাল। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদের নেতৃত্বে বিকেলে ১০-১৫টি ট্রলারে করে আসেন মেয়রের সমর্থকেরা। তাঁরা ট্রলার থেকে নেমে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মকবুল হোসেনের এলাকা দিয়ে মিছিল করে অনুষ্ঠানস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। মকবুল হোসেন মৃণাল কান্তির ডান হাত হিসেবে পরিচিত।

ওই সময় কাউন্সিলর মকবুল হোসেনের ভাই মনির হোসেন লোকজন নিয়ে মিছিলে বাধা দেন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি থেকে একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে মনির হোসেনসহ দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশকে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। আবার অনেকেই নারায়ণগঞ্জের দিকে চলে যান। পরে গজারিয়া থেকে সমাবেশে আসা আরও ১০-১৫টি ট্রলারকে নদীর তীরে ভিড়তে দেননি কাউন্সিলরের লোকজন।

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এম ফেরদৌস বলেন, সাতজন আহত অবস্থায় মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

হামলা পর পৌর মেয়রের সভায় আসা নেতা-কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সেখানে তাঁরা সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পৌর মেয়র ফয়সাল বিপ্লব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠান করছি। সে অনুষ্ঠানে আসা নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছেন সংসদ সদস্য মৃণালের লোকজন। আমরা পুলিশ সুপারের কাছে এর বিচার চাই। এর বিচার না হলে উচিত জবাব দেওয়া হবে।’

মারামারির বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেন সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস। বলেন, ওই সময় একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গজারিয়ায় ছিলেন। ঘটনার পেছনে কারা আছেন, সেটি খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের তিনি অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষে কাউন্সিলরের এক ভাই এবং গজারি থেকে আসা চার-পাঁচজন আহত হওয়ার খবর তিনি শুনেছেন। ঘটনার পর থেকে হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রথম আলো