দফায় দফায় কেন্দ্র দখলচেষ্টা ব্যর্থ

স্বাধীনতার পর থেকেই জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের উত্তর যশলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও যশলদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মারার ঘটনা ঘটে এসেছে। কিন্তু মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এই প্রথম কেন্দ্র দুটিতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। কেন্দ্র দখলের চেষ্টা থাকলেও প্রশাসনের কঠোরতার কারণে তা ব্যর্থ হয়েছে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছেন।

ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে চেয়ারম্যান পদে দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বিএম শোয়েবের পক্ষে প্রভাব বিস্তার করে দফায় দফায় কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালিয়েছেন মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আশরাফ খান।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যদের তৎপরতা। ছবি-সমকাল

উত্তর যশলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার এইচএম লুৎফর রহমান বলেন, উপজেলার ৬৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় ১ নম্বরে ছিল এই কেন্দ্রটি। দোয়াত কলম প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা কয়েক দফা চেষ্টা করেও কেন্দ্র দখলে নিয়ে ব্যালট পেপারে সিল মারতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের কেন্দ্র দখলের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। এই কেন্দ্রে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রায় ৪২ শতাংশ ভোট পড়ে।

জানা গেছে, শুধু উত্তর যশলদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রই নয়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের একাধিক ভোটকেন্দ্র দোয়াত কলম প্রতীকের পক্ষে দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে একাধিক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা। তবে প্রশাসনের কঠোরতার কারণে কেন্দ্র দখল করতে না পারলেও নারীদের বোরকা পরিয়ে জাল ভোট দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে।

বেলা ১১টার দিকে দেখা গেছে, বি এম শোয়েবের বাড়ি-সংলগ্ন হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সারিবদ্ধভাবে না দাঁড়িয়ে জটলা পাকিয়ে বেশ কিছু বোরকা পরা নারী ভোটার পর্যায়ক্রমে জাল ভোট দিচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ৬৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ২০ থেকে ২২টি কেন্দ্রে এমন জাল ভোটের মহোৎসব চলেছে।

কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী ও লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ সিকদার বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পক্ষে দলের একাধিক প্রভাবশালী নেতা বিভিন্ন কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে জাল ভোটের মহোৎসব চালিয়েছে। এমনকি একাধিক কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালায়। তবে প্রশাসন কঠোর থাকায় কোনো কেন্দ্র দখল করতে পারেনি তারা।

তবে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ খান বলেন, কেন্দ্র দখলচেষ্টার অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ায় ইউনিয়নের প্রতিটি কেন্দ্র ঘুরে দায়িত্বে থাকা পিসাইডিং অফিসারদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন বলে দাবি তাঁর।

সকাল সোয়া ৮টার দিকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার গোয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রটির মাঠ একেবারে ফাঁকা। কোথাও কোনো ভোটার নেই। এ কেন্দ্রের ৩ হাজার ৪৬৪ ভোটের মধ্যে সকাল সোয়া ৮টা পর্যন্ত ৯টি ভোট কক্ষে ৩০টির মত ভোট পড়েছে। এদিন সকাল ১০টার দিকে দক্ষিণ বেতকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৩৮ জন । দুই ঘণ্টায় ভোট দেন মাত্র ২১২ জন।

গোয়ারা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল বাছেদ বলেন, ভোটার উপস্থিতি কম। তবে বেলা বাড়লে উপস্থিতি বাড়বে।

সমকাল

Leave a Reply