‘কঙ্কাল’ নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী জহির আহমেদ

মোজাম্মেল হোসেন সজল : যদি সব সাগরের জল, কালি হতো, পৃথিবীর সব গাছ লিখনি হতো আর সারাটা জীবন শুধু লিখে যেতাম, তবুও.. তোমার আমার প্রেমের লেখা শেষ হতো না/ তোমাকে হারাতে যদি হয়, লাগে মনে এই ভয়/যাই করো, প্রেমকে অবহেলা করো না, সবকিছু হারিয়ে প্রেমকে বুকে ধরে রেখেছি/ ভালোবাসা হয় যদি অপরাধ, তবে দু’জনই সমান অপরাধী, কাঁদবে তুমিও যদি আমি কাদি/তাজমহল দেখে মনে হয়, যেনো আজও সে প্রেম এসে কথা কয়-৮০ থেকে ৯০ দশকের সেই সারা জাগানো (হিটগানের) গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী জহির আহমেদ নতুন এ্যালবাম (ক্যাসেট) নিয়ে আবার আসছেন। তাঁর প্রেম’- নামের ক্যাসেটটির ১২টি গানই সুপার হিট হয়।

এখনও সঙ্গীত প্রেমীদের কাছে প্রেম অ্যালবামটির গানগুলো হিট হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু প্রেমী জহির আহমেদ-এর জন্ম মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের মুক্তারপুর গ্রামে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের উপর তিনি কয়েকটি ক্যাসেট বের করেছেন। সেই ক্যাসেটের গানও জনপ্রিয় করে তুলে জহির আহমেদকে। ১৯৭৭ সালে “সেই ব্যথা যায়না ভুলা” নামে ক্যাসেটে ‘মুজিব ঘুম যাওরে, চিরসবুজ বাংলাদেশে/ সেই ব্যথা যায়না ভুলা, দুধের শিশু শেখ রাসেলেরও কাহিনী-গান বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এরপর ১৯৮৫ সালে মুজিব মানেই বাংলাদেশ, মুজিব মানেই স্বাধীনতা, মুজিব মানেই সারাবিশ্বে বাংলাদেশের পতাকা গানের কলিতে “হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমান” শিরোনামে এ্যালবামটির গানগুলো একশ্রেণীর সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছেও জনপ্রিয়তা পায়।

এরআগে ১৯৮৪ সালে তার প্রেম ক্যাসেটটির ১২ টি গানই সারাদেশের সঙ্গীতপ্রেমীদের হ্নদয় জাগিয়ে তুলে। ১৯৯৪ সালে “বিষের পেয়ালা” ১৯৯৫ সালে অভিশপ্ত প্রেম এবং সবশের্ষ ১৯৯৬ সালে “কার আশায় আর বেঁচে থাকবো”-শিরোনামে ক্যাসেট বের হয়। জহির আহমেদ-এর লেখা ও সুরে আবদুল জব্বার গেয়েছেন ‘কি গান শুনাবো ওগো বন্ধু, এবং সাবিনা ইয়াসমিন কণ্ঠ দিয়েছেন ‘প্রেম কেন ব্যথা দেয়’। রেডিও এবং বেতারসহ জহির আহমেদ গান গেয়েছেন দুইশোর মতো। সব গানই তার লেখা, সুর ও কণ্ঠে। দীর্ঘ বিরতির পর জহির আহমেদ প্রায় ২১ বছর পর আবার আসছেন নতুন অ্যালবাম নিয়ে। রেকডিংয়ে কাজ শেষ। ক্যাসেটটির নাম দিয়েছেন, “একাত্তর’র মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কঙ্কালের আত্মকাহিনী”। “দোহাই তোমার কাছে এসো একবার, ভয় পেয়োনা শোনো আমি এক মৃত মানুষের হাড়” গানের কলিতে এই ক্যাসেটটি হবে ৩০মিনিটের। এখানে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক কিছু কথা ও একটি গান থাকবে।

নতুন ক্যাসেট প্রসঙ্গে জহির আহমেদ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের পর নারায়নগঞ্জে যাওয়ার পথে ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে একটি কঙ্গাল দেখতে পান তিনি। এক যুবক বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে শহীদ হয়েছেন-কঙ্কালটির এমন ধারণা নেন তিনি। এই ধারণা নিয়ে তিনি এই ক্যাসেট বের করছেন। ক্যাসেটটিতে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং পাকিস্থানীদের শোষণের কিছু কথা ও গানে তা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি এর সিডি কয়েকজন মন্ত্রীকে দিয়েছেন পরিবর্তন ও পরিমার্জন করার জন্য। সেখান থেকে সারা না পেলে জহির আহমেদ সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাবেন। তাদের সারা না দেয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে অ্যালবামটি স্রোতাদের জন্য বাজারে ছাড়বেন। তিনি এ যাবত কোন অ্যালবামই কারও সহযোগিতা নিয়ে বাজারে ছাড়েননি। অ্যালবাম নিজ খরচে রেকডিং করার পর তা অডিও ক্যাসেট কোম্পানীর কাছে বিক্রি করে দেন।

কণ্ঠশিল্পী জহির আহমেদ বলেন, তিনি ব্যবসার জন্য গান করেননা। শখে গান করেন। তার বাবা আলহাজ আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও মামা হাজী আনছার আলী ভালো গান গাইতেন। এতে তার গানের প্রতি আগ্রহ জন্মে। তিনি একা একাই গান গাইতে ও লিখতে থাকেন। এরপর তিনি তার বাবার পকেট থেকে ৬০ টাকা নিয়ে একটি হারমনিয়াম কিনে গান শুরু করেন।

১৯৬৫ সালে জহির আহমেদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান শুরু করেন। ১৯৬৭-তে তৎকালীন রেডিও পাকিস্থান ঢাকা কেন্দ্রে অডিশনে অংশ নেন। স্বাধীনতার আগে হিজ মাস্টার ভয়েজ কোম্পানির, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের ঢাকাতে গীতিকার, সুরকার ও কন্ঠশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তার লেখা ও সুরে, দুটি গণসঙ্গীতও রেকর্ড করা হয়। সে গণসঙ্গীত দুটি ছিল কোরাস। শিল্পী ছিলেন তিনি নিজে, রেজা মজিদ, আলেয়া শরাফি ও লিলি হক। ১৯৬৮-৬৯ সালে শিল্পী জহির আহমেদ সর্ব প্রথম ঢাকাস্থ ওয়াপদা মিলনায়তনে মো. আবদুল জব্বার, আবদুল আলীম, নীনা হামিদ, মলয় কুমার গাঙুলী ও মুন্নী বেগম এক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তারপরই তিনি টেলিভিশনে কন্ঠশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

জনপ্রিয় শিল্পী জহির আহমেদ-এর মতে, এখন ভালো মানের গান হয় না। দেশিয় সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গেছে। আধুনিক গানের সুন্দর ও মিষ্টিকথাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভৌতিক ও কল্পনার গান আমি গাইতে পারি না, চোখে যা দেখি, শুনি এবং বাস্তবের নিরিখে গান করি।

Leave a Reply