অস্ত্রবাজ ক্যাডারদের ধরতে পুলিশের অভিযান শুরু!

মুন্সীগঞ্জে প্রকাশ্যে চলছে সরকারদলীয় ক্যাডারদের অস্ত্রের মহড়া। এ অবস্থায় জেলাজুড়ে এখন খুন-খারাবি চলছে। এতে শহরসহ জেলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সম্প্রতি অস্ত্রবাজদের ধরতে ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ-যুবলীগের কয়েকজন ক্যাডারকে গ্রেফতারও করেছে।

গত ১৫ অক্টোবর সদর থানা পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী যুবলীগ কর্মী শাহজালালকে নাইন এম এম পিস্তলের ৪ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ শহরের মধ্য কোর্টগাঁও এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ কর্মী সন্ত্রাসী দীপু দেওয়ানকে (২৫) গ্রেফতার ও তার বাড়ি থেকে একটি বিদেশী পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। দীপু দেওয়ানের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে গিয়ে ১৯ নভেম্বর শহরের গণকপাড়ায় বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন কনস্টেবল জিয়া (৩৫)। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসী কানা সুমন (৩৩) ও জুয়েলকে (৩০) গ্রেফতার করেছে। গুলিবিদ্ধ জিয়াকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গত এক মাসের ব্যবধানে শহরে কয়েক দফা গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ডাকাত ও পুলিশের মধ্যেও গুলিবিনিময় হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খুন হয়েছে অন্তত সাতজন। এ ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে ল্য করে জেলা পরিষদ ভবন ও শহরের জমিদারপাড়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসের বাড়িতে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ দু’টি স্থান থেকে পুলিশ গুলির খোসা উদ্ধার করে। এ ঘটনার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী ওই দুই নেতা পরস্পরকে দায়ী করেছেন।

গত ১৪ অক্টোবর বেলা ২টার দিকে শহরের পুরাতন কাচারি এলাকার পিন্টু টেলিকমের মালিক আবদুর রহিম পিন্টু ও তার বন্ধু তুষার আহম্মদকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। এ সময় তারা অস্ত্রের মহড়া দেয় বলে পিন্টু জানান। এ ঘটনায় ওই দিন বিকেল সাড়ে ৩টায় পিন্টুর বড় ভাই মিন্টু মিয়া বাদি হয়ে শহরের মধ্য কোর্টগাঁও এলাকার দীপু, রানা ও অপুসহ পাঁচজনের নামে সদর থানায় সাধারণ ডাইরি করেছেন। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পিন্টু টেলিকম অফিসে গুলি চালায় একদল সন্ত্রাসী। গুলির আঘাতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটারের মনিটর ভেঙে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ওই দিন রাত সাড়ে ৭টার দিকে ব্যবসায়ী মিন্টু মিয়া বাদি হয়ে মধ্য কোর্টগাঁও এলাকার দীপু, রানা ও অপুসহ পাঁচজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১৪ অক্টোবর জামিন নিয়ে একই সন্ত্রাসীরা এ হুমকি দেয়।

গত ৩ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালসংলগ্ন সড়কে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সমর্থক যুবলীগ কর্মী অঙ্কন (৩২) প্রতিপরে গুলিতে আহত হন। তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পর দিন সকালে মুন্সীগঞ্জ সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের সমর্থক ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক মিথুনকে আসামি করে গুলিবিদ্ধ অঙ্কনের বাবা সিরাজুল ইসলাম বাদি হয়ে সদর থানায় মামলা করেন। এর আগের দিন বিকেল সাড়ে ৫টায় শহরের গণপূর্ত ভবন সড়কের কাছে এমপি সমর্থকদের ওপর হামলা ও ঈদ শুভেচ্ছার ফেস্টুন বিনষ্ট করার অভিযোগে ওই দিন রাতেই আবু বক্কর সিদ্দিক মিথুন অঙ্কনসহ ৯ জনকে আসামি করে মুন্সীগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

গত ১ অক্টোবর শহরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায় বেলা দেড়টার দিকে সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নয়াগাঁও গ্রামের জাহিদ হাসান ও মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মকবুল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শাহাবুদ্দিনকে (২৪) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, সিফাত (১২) ও সাদেক হোসেন (৫০) ও অনিককে (১৭) মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শহরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায় একই গ্রুপের মধ্যে হামলা ও গুলিবিনিময়ে কাউন্সিলর গ্রুপের বাবুল শেখ (৩৮) গুলিবিদ্ধসহ পাঁচজন আহত হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টায় মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে পুলিশের সাথে ডাকাতদের বন্দুকযুদ্ধ হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রিঙ্কু (২২) ও কিশোর শাকিলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

নয়াদিগন্ত

Leave a Reply